২০২৫ সালে সুদানের ভয়াবহ মানবিক সংকট

২০২৫ সালে সুদানের ভয়াবহ মানবিক সংকট
২০২৫ সালে সুদানের ভয়াবহ মানবিক সংকট। ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের শেষ দিকে সুদান এক ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সেনাবাহিনী ও র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (RSF) মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধের প্রভাবে সুদান এখন মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

খাদ্য সংকট

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ—যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক—খাদ্য সংকট ও মানবিক সাহায্যের অভাবে ভুগছে। এই সংকট মোকাবেলায় জরুরি মানবিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হলেও সংঘাত পরিস্থিতি তা আরও কঠিন করে তুলছে।

উদ্বাস্তু সংকট

যুদ্ধের কারণে সুদানের উদ্বাস্তু সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে ৩.২ মিলিয়ন মানুষ চাদ, দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া, উগান্ডা এবং মিশরের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। অভ্যন্তরীণভাবে ৮.৭ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধ চলতে থাকলে এই সংকট আরও তীব্র হবে।

স্বাস্থ্য খাতে বিপর্যয়

সুদানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাইছাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম চলমান মানবিক সংকটকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। যুদ্ধের কারণে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। এ যুদ্ধে দেশটির অনেক হাসপাতাল ধ্বংস হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে।

এদিকে দেশটিতে মহামারীর মতো একাধিক রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। পাশাপাশি মৌলিক চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন।

শিশুদের দুর্দশা

সুদানে চলমান সংকটের সবচেয়ে করুণ শিকার হচ্ছে শিশুরা। তারা সহিংসতা, অপুষ্টি এবং রোগব্যাধিতে ভুগছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, প্রায় ১৭ মিলিয়ন শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তাদের ভবিষ্যৎ গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

শিশুরা শুধু শারীরিক সমস্যাই নয়, মানসিক আঘাতেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাদের জীবন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সবক্ষেত্রেই সংকট ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

সুদানে চলমান এই সংকট শুধু দেশটির মানুষের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জন্যও বিরাট চ্যালেঞ্জ। সংঘাতের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

২০২৫ সালে যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠা এবং সুদানের মানুষের জীবনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে উঠছে।

আমাদের ফলো করুন