নিউজনেস্ট

সোপোর হত্যাকাণ্ড দিবস: কাশ্মিরে কি ঘটেছিল সেদিন?

সোপোর হত্যাকাণ্ড দিবস: কাশ্মিরে কি ঘটেছিল সেদিন?
সোপোর হত্যাকাণ্ড দিবস: কাশ্মিরে কি ঘটেছিল সেদিন? ছবি: কাশ্মির লাইফ

আজ ২৬ বছর পরও ১৯৯৩ সালের সোপোর হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ স্মৃতি সোপোর শহরের মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। ১৯৯৩ সালের ৬ জানুয়ারি। সোপোর শহরের আকাশ ঢেকে গিয়েছিল ধোঁয়া আর শোকের কালো মেঘে। সেদিন সন্ত্রাসী ভারতীয় বাহিনী সোপোর শহরে চার ঘণ্টাব্যাপী নৃশংস অভিযান চালিয়ে ৫৭ নিরীহ কাশ্মিরিকে শহিদ করে এবং ৪শ’র অধিক বাড়ি ও ৫৭টি দোকান পুড়িয়ে দেয়। এ ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ছিল কাশ্মিরি মুসলমানদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা দমন করার একটি ঘৃন্য ষড়যন্ত্র।

স্মৃতি বেদনায় ভরা, তখনকার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ১৯৯৩ সালের এক শীতল জানুয়ারির সকালে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। তারা বলেন, সেদিন একটি বিদ্রোহী হামলাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। কিছু স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীরা সেনাদের লক্ষ করে গুলি ছুঁড়লে সেনারা পাগলের মতো গুলি চালাতে শুরু করে এবং নিরস্ত্র মানুষদের ওপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে অনেককেই পুড়ে মেরে ফেলা হয়।

সোপোরের ওই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার গোলাম রাসুল গনাই বলেন, সেদিন বিদ্রোহীদের হামলার পর সেনারা হিংস্র হয়ে গিয়েছিল। তারা গুলি চালিয়ে নির্বিচারে বেসামরিক মানুষদের হত্যা করেছিল। নিহতদের মধ্যে কিছু মানুষ জীবন বাঁচাতে দোকানে আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু তারাও প্রাণে বাঁচতে পারেনি। তারা দোকানে প্রবেশ করেই তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি আরও জানান, সেনারা একটি বাসের চালককে হত্যা করে সেই বাসে থাকা ২০ জন যাত্রীকে এক মুহূর্তে গুলি করে মেরে ফেলে।

এছাড়া সন্ত্রাসী সেনারা আশপাশের বাড়ি ও দোকানে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। হাজার হাজার মানুষের দোকান, ঘর-বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। শালপোরা, শাহাবাদ, মুসলিমপীর, ক্ৰালটাং এবং আরাম্পোরা এলাকার হাজারো মানুষ এতে নিঃস্ব হয়ে পড়ে।

যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের মন এখনও শোকে ডুবে আছে। শালপোরা এলাকার শালা পরিবারের এক সদস্য বলেন, সেই হামলায় আমরা চারজন প্রিয় মানুষকে হারিয়েছি। তারা ছিল আমাদের পরিবারে খুবই কাছের। তারা তাদের ট্রাক উদ্ধার করতে গিয়ে এক দোকানে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু সেই দোকানেও সন্ত্রাসী সেনারা ঢুকে তাদের হত্যা করে।

তবে কিছু মানুষ আজও সেই রাতের ভয়াবহ দৃশ্য ভুলতে পারেননি। তারেক আহমাদ কানজওয়াল ২০ বছর বয়সে এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি এখনও ওই দৃশ্য ভুলতে পারি না, একজন মানুষকে আমি দোকানে পুড়ে যেতে দেখেছিলাম। তার মাথা আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল। সেই দৃশ্য আমাকে এখনো সবসময় তাড়া করে! এছাড়া শাহিন স্টুডিওর মালিক এবং তার সহকারীকেও পুড়ে মরতে দেখা গিয়েছিল, তাদের মৃত্যুও ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক!

৩২ বছর পেরিয়ে গেলেও এ গণহত্যার দায়ী উগ্র হিন্দুবাদী সন্ত্রাসী সেনারা আজও বিচারহীন। সোপোর গণহত্যা কাশ্মীরি জনগণের নির্যাতনের ইতিহাসে এক গভীর ক্ষত এবং হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় দখলদারিত্বের নির্মমতার উদাহরণ।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত