নিউজনেস্ট

প্রযুক্তি এআই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে একধাপ এগিয়ে চীন

প্রযুক্তি এআই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে একধাপ এগিয়ে চীন
প্রযুক্তি এআই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে একধাপ এগিয়ে চীন। ছবি: এআই

বিশ্ব প্রযুক্তি দুনিয়ার চোখ এখন চীনের দিকে। মাত্র ৫.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে তৈরি চীনের ডিপসিকের (v3) মডেল গৌরবের নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। ২৬ ডিসেম্বর ডিপসিক ঘোষণা করে, তাদের তৈরি এ মডেল ওপেন এআইয়ের জিপিটি-৪ এর সমান কর্মক্ষমতা অর্জন করেছে। অথচ জিপিটি-৪-এর প্রশিক্ষণ ব্যয় ছিল ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চীনের প্রযুক্তি অঙ্গনে এই অগ্রগতি শুধু আরেকটি সফল উদ্ভাবন নয়; এটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এআই ও চিপ প্রযুক্তি সীমিত করার যে কৌশল, তার বড় ধরনের ব্যর্থতারও প্রমাণ।

উন্মুক্ত মডেলে নতুন অধ্যায়

ডিপসিক তাদের (v3) মডেল উন্মুক্ত করেছে, যা যে কেউ ব্যবহার ও উন্নত করতে পারবে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই উদ্যোগ শুধু প্রযুক্তি উন্নয়নে নয়, উদ্ভাবনের সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে।

এই মডেল ঘোষণার সময়টাও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সিলিকন ভ্যালির বিশেষজ্ঞরা যখন মনে করছেন, এআইয়ের অগ্রগতি হয়তো শেষ প্রান্তে পৌঁছেছে, তখনই ডিপসিক প্রমাণ করল, কম খরচেও বড় সাফল্য অর্জন সম্ভব।

তবে চীনই একা নয়। একই সময়ে ওপেনএআই তাদের নতুন মডেল (03) প্রদর্শন করেছে। এই মডেল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ৯৯.৯ শতাংশ প্রোগ্রামারকে হার মানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন: লড়াই আরও উত্তপ্ত

এআই গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। চিপ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চীনের অগ্রগতি থামেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, এআইয়ের পরবর্তী অধ্যায় কী হতে পারে।

আগে এআই মডেলগুলো শুধু কথোপকথনে দক্ষ ছিল। কিন্তু (03) মডেল দেখিয়েছে মানুষের মতো যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা। এটি শুধু সহজ কাজই নয়, জটিল গাণিতিক সমস্যাও সমাধান করতে সক্ষম।

শক্তি ও মেধায় এগিয়ে চীন

এআই উন্নয়নে শক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। ভার্জিনিয়ার মতো জায়গায় নতুন ডেটা সেন্টার স্থাপনে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে কয়েক বছর লেগে যায়। বিপরীতে চীন তাদের বিদ্যুৎ অবকাঠামো দ্রুত বাড়াচ্ছে। গত এক দশকে চীনের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।

তবে চীনের সাফল্যের আসল রহস্য তাদের মেধার ব্যবহার। বড় প্রতিষ্ঠান নয়। কেননা তাদের মাত্র ২০০ সদস্যের ডিপসিক গবেষণাগার এই মহা সাফল্য অর্জন করেছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বৈশ্বিক মেধার কেন্দ্রস্থল। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, চীনা গবেষকেরা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে চীনকে আটকে রাখার চেষ্টা অর্থহীন বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, চীনকে হারানোর একমাত্র উপায় হলো তাদের চেয়ে এগিয়ে থাকা। আমাদের আরও দ্রুত দৌড়াতে হবে, আরও উদ্ভাবন করতে হবে।

চীনের গবেষকরা ইতিমধ্যেই ওপেন এআইয়ের মডেল পদ্ধতি পুনর্নির্মাণে কাজ শুরু করেছে। এতে এআইয়ের পরবর্তী স্তরে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রতিযোগিতা আরও উত্তপ্ত হবে।

চীনের অগ্রগতি শুধু এআই প্রযুক্তিতে নয়, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত