নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তাদের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সংস্কার অত্যন্ত জরুরি, বিশেষত তাদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা। তাদের মতে, র্যাব বিলুপ্ত না করলে ভবিষ্যতে এই বাহিনী অন্য কোনো সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর থেকে এ বাহিনীর কার্যক্রমে বিভিন্ন সরকারের ‘দায়মুক্তি’ দেওয়ার সংস্কৃতি চালু রয়েছে। এর ফলে র্যাবের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বাহিনীর এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, র্যাবের একটি বিশেষ দল এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ২০১৬ সালে র্যাবে যোগ দেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, তার প্রশিক্ষক গর্ব করে বলেছিলেন, তিনি ১৬৯টি ক্রসফায়ার পরিচালনা করেছেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র র্যাব এবং বাহিনীর সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একইভাবে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছিল।
র্যাব বিলুপ্তির প্রসঙ্গে বাহিনীর প্রধান এ কে এম শহীদুর রহমান স্বীকার করেছেন, র্যাবে আয়না ঘরের অস্তিত্ব রয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলে র্যাব বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তুত।
এই পরিস্থিতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘ এবং দাতা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, র্যাব বিলুপ্তির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। যাতে তারা অন্য ইউনিটে গিয়ে একই ধরনের কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে। সংস্থাটি আরও বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাঠামোগত সংস্কার না হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মানবাধিকার বিষয়ক অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তার মতে, র্যাবকে এতদিন সব সরকারই নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাই এই বাহিনীকে সংস্কার করা সম্ভব নয়, একে বিলুপ্ত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।







