মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বুথিডাং শহরে প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে বাড়িঘর ছেড়ে ধানের ক্ষেতে অস্থায়ী আশ্রয় তৈরি করে বসবাসের নির্দেশ দিয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরাকান আরাকান আর্মি।
রোববার শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়ার জন্য সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে তীব্র দারিদ্র্যে দিন কাটাচ্ছেন এবং কোনো ধরনের মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন না। তাদের খাবার ও পানীয় জোগানোর উপায় নেই। অস্থায়ী আশ্রয়েও নেই কোনো নিরাপত্তা।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের ঘরছাড়া করার পর শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় থাকা হিন্দু ও রাখাইন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে আরাকান আর্মির শাসনে রোহিঙ্গারা বৈষম্যের শিকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এটি রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের একটি পরিকল্পনার অংশ। এক মানবাধিকার কর্মী মন্তব্য করেন, ‘এই জোরপূর্বক উচ্ছেদ রোহিঙ্গাদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়নের আরেকটি দৃষ্টান্ত।’
গত দুই মাসে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের অভাবে পরিস্থিতি ক্রমশ আরও অবনতি হচ্ছে। এতে হাজারো পরিবার দুর্ভিক্ষ, রোগের প্রাদুর্ভাব ও পুনরায় বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে পড়েছে।
এ মাসের শুরুতে আরাকান সেনা রোহিঙ্গাদের জানায়, তারা আর বুথিডাং শহরের বাড়িঘরে ফিরতে পারবে না। তাদের অস্থায়ী কোন শরণার্থী শিবিরে বসবাসের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যদিকে, মংডু শহরে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া থেকে রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে সেখানে শুধু হিন্দু ও রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের মে মাসে বুথিডাং শহর দখলের পর সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের চলাচলে বিধিনিষেধ, জোরপূর্বক নিয়োগ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও গ্রাম ধ্বংসসহ নানা সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পরিচালিত ‘গণহত্যার’ কারণে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তবে সাম্প্রতিক সংঘাতও রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে সহিংসতা ও নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
সূত্র : AnA







