বিশ্ব মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হযরত মোহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা সোহেল গালিব ও মহান আল্লাহর শানে বেয়াদবিমূলক পোস্টদাতা সাজ্জাদুর রহমান ওরফে রাখাল রাহার শাস্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ওলামা-জনতা ঐক্য পরিষদ ও তাওহিদি জনতা৷ পবিত্র জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামে ইসলামের তীর্থস্থান খ্যাত আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে ওলামা-জনতা ঐক্য পরিষদের ডাকে হাজার হাজার তাওহিদি ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়।
আন্দরকিল্লা প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিশেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী। তিনি উত্তাল জনতার উদ্দেশ্যে বলেন; ‘৫ আগস্ট আমাদেরকে কেই রক্ষা করেনি। অ্যামেরিকা আমাদের রক্ষা করেনি, ভারত আমাদের রক্ষা করেনি, জাতিসংঘ আমাদের রক্ষা করেনি। বিশ্বশক্তি আমাদের পক্ষে ছিল না, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা পক্ষে ছিল না, বিদেশি কোনো শক্তি সাথে ছিল না। এ দেশের জনগণ সেদিন কথা বলেছিল, এদেশের জনগণ রক্ত দিয়েছিল, আলেম-ওলামা রক্ত দিয়েছিল। এই আন্দোলনে কোনো ক্রেডিট নেই আল্লাহ ছাড়া। এই বাংলাদেশ আমাদের বাংলাদেশ, তাওহিদি জনতার বাংলাদেশ, তিতুমীরের বাংলাদেশ, সৈয়দ আহমদ শহিদের বাংলাদেশ। এদেশে আল্লাহ ও তাঁর নবির বিরুদ্ধে অবমাননা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে কেউ ছাড় পাবে না, ইনশাআল্লাহ!’
পাশাপাশি সমাবেশে বক্তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে গুম-খুনের নায়ক, র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করে ৭ দফা দাবি পেশ করেন।
৭ দফা কর্মসূচি
১. মহান আল্লাহ সম্পর্কে চরম কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের দায়ে রাখাল রাহাকে দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে তাকে পাঠ্যবই সংস্কার কমিটি থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
২. শাতিমে রসুল সা. সোহেল গালিবের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তার ইসলামবিদ্বেষী বইসমূহ নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. দেশে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করতে হবে। যাতে ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্ম অবমাননাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলামবিদ্বেষী অপপ্রচার ও উসকানি রোধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে।
৪. আলেম-ওলামা ও সাধারণ তাওহিদি জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. গুম, নির্যাতন ও জোরপূর্বক ১৬৪ ধারা জবানবন্দি নেওয়ার মাধ্যমে সাজানো মামলায় দণ্ডিতদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং সকল সাজা বাতিল করতে হবে।
৬. গুম ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত র্যাব, সিটিটিসি, ডিজিএফআইসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, ‘স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ সংশোধন করে গুম ও হত্যার পথ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
৭. জুলাই আন্দোলনের গণহত্যার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ ও তাদের সকল অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং গণহত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এই ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা করেন বক্তারা। এতে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা মোয়াজ্জেম হোসাইন, আইমান কাসির, মোহাম্মদ সাদ, মাসরুর আনোয়ার চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে তাওহিদি জনতার ব্যানারে একই দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে মতিঝিলের ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরে গিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন; ‘আমরা দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে কিছু বললেই আমাদের বলা হয় প্রতিক্রিয়াশীল। আমরা যখন নবির ইজ্জতের প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তখন বলা হয় তাওহিদি জনতা প্রতিক্রিয়াশীল। সরকার ন্যাপকিন নিয়ে সোচ্চার, সংবিধান নিয়ে সোচ্চার, প্যাড নিয়ে সোচ্চার, আরও অনেককিছু নিয়ে সোচ্চার। কিন্তু আমরা যখন আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ভালোবাসার দাবি নিয়ে সোচ্চার হই, তখন তারা আমাদের সবক দেয় দেশকে অস্থিতিশীল করবেন না। আমরা বলতে চাই, এই দেশকে স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব কি শুধু আমাদের? দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আল্লাহ ও নবি অবমাননাকারীদের বসিয়ে রেখে আপনারা কেন আমাদের অস্থিতিশীল করে তুলছেন? অনতিবিলম্বে রাখাল রাহাকে গ্রেফতার না করে আরও কঠোর থেকে কঠোর হবে এই আন্দোলন।’
সিলেবাস সংস্কার কমিশন থেকে রাখাল রাহাকে দ্রুত অপসারণপূর্বক শাস্তির দাবি ও গুম-খুন, র্যাব-পুলিশ কর্তৃক নির্যাতন, আয়নাঘর সহ ধর্ষক র্যাব অফিসার আলেপ উদ্দিনের শাস্তির ব্যাপারেও কথা বলেন বক্তারা। এতে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস নদভী, সিয়ান পাবলিকেশনের এমডি আহমদ রফিক, মাওলানা আবু ত্বহা আদনান, মাওলানা শের মুহাম্মদ, বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের মাওলানা ইসহাক খান প্রমুখ।
এছাড়াও সিলেট, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, উত্তরা, সীতাকুণ্ড সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে ওলামা-জনতা ঐক্য পরিষদ।