আফগানিস্তান ও ভারতের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, নয়াদিল্লিতে আফগান দূতাবাসে ইসলামি ইমারাতের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে ভারত। এটি আফগানিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কাবুল-নয়াদিল্লি ঘনিষ্ঠতা বাড়লে পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রভাব হ্রাস পেতে পারে, যা ইসলামাবাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
৭০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক আফগান রপ্তানি
এদিকে ভারতের সাথে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সম্পর্কও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত দশ মাসে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৭০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যেখানে আফগান রপ্তানিই প্রধান। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা পেরিয়ে আফগানিস্তান তার বৈদেশিক সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে চাইছে, যেখানে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে।
ভারত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি। দেশটির ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা এমন যে, আফগানিস্তানের জন্য দিল্লিকে উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। তবে আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার বারবার বলছে, তারা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কোনো পক্ষ নেবে না, বরং সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
ইসলামাদের উদ্বেগের কারণ
পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবেই আফগানিস্তানকে তার কৌশলগত বলয়ের অংশ হিসেবে দেখে এসেছে। তবে ২০২১ সালে মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর কাবুলে ইসলামি ইমারাতের সরকার গঠিত হলে পাকিস্তানের প্রভাব কমতে থাকে। নতুন আফগান সরকার তাদের নীতি স্বাধীনভাবে চালানোর চেষ্টা করছে, যা ইসলামাবাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলবি আমির খান মুত্তাকি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, কাবুল তার স্বার্থ রক্ষায় স্বাধীনভাবে কাজ করবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করলেও পাকিস্তানের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, আবার পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারতকে এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ চার দশকের যুদ্ধ ও বিদেশি দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে আফগানিস্তান এখন স্বাধীনভাবে বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করতে চায়। দোহা চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ হারিয়েছে, যা কাবুলকে কৌশলগত স্বাধীনতা দিয়েছে। বর্তমানে আফগানিস্তান ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এড়ানোর চেষ্টাও করছে।
তবে কাবুলের এই ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হবে না। দক্ষিণ এশিয়া এমনিতেই ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ কৌশলগত হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা মানেই পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা নয়—এই বার্তাটি স্পষ্ট করা আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি তারা সঠিক কৌশলে এগোয়, তাহলে তারা আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে, যা আফগানিস্তানের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতায় দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সূত্র: এইচ রেডিও