নিউজনেস্ট

মহারাষ্ট্রে মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকান গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

মহারাষ্ট্রে মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকান গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
মহারাষ্ট্রে মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকান গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

ভারত-পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ চলাকালে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে মহারাষ্ট্রের মালভন পৌরসভা এক মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকান ভেঙে দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। অভিযোগ ওঠার পরপরই হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ শুরু করে এবং ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায়।

গত রোববার ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালে রোহিত শর্মার আউটের পর এক মুসলিম স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ শুরু করে এবং ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি মালভন পৌরসভা ও স্থানীয় পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বুলডোজার দিয়ে ওই ব্যবসায়ীর দোকান ভেঙে ফেলে। প্রশাসনের দাবি, দোকানটি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল এবং দখলদারির অভিযোগ ছিল।

শিবসেনার বিধায়ক নিলেশ রানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দোকান ভাঙার একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, এক মুসলিম অভিবাসী স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী ভারতবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। তাকে জেলায় থাকতে দেওয়ার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব। তবে আনন্দের বিষয় হল, তার আগেই তার অবৈধ দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে একদল ক্রিকেটপ্রেমীর বিরাট কোহলির শতরান উদযাপনের ভিডিওর সঙ্গে এই ঘটনার তুলনা টানেন।

একজন ব্যবসায়ী লিখেছেন, পাকিস্তানিরা কোহলির সেঞ্চুরি উদযাপন করছে। কিন্তু যদি কোন ভারতীয় বাবর আজমের শতরান উদযাপন করত, তাহলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, ইউএপিএ বা এনএসএ আইনে মামলা হত!

এই বিতর্কের ফলে ভারতে জাতীয়তাবাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সমালোচকদের মতে, এই ঘটনাটি স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ এবং জাতীয়তাবাদের প্রয়োগ নিয়ে পক্ষপাতমূলক আচরণের উদাহরণ। কেউ কেউ বলছেন, ভারতীয় মুসলিমরা কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে শাস্তির মুখে পড়ছেন, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

এ ঘটনার বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রশাসনের এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ একপক্ষীয় বিচার ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে উসকে দিতে পারে।

এদিকে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া আইনসিদ্ধ নয় এবং এটি সাম্প্রদায়িক বৈষম্য বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারতে ক্রিকেট বরাবরই আবেগের বিষয়। কিন্তু এই আবেগ যদি সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভাজনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেটি শুধুই খেলার চেতনাকে নয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত