নিউজনেস্ট

ধর্মীয় অবমাননা: বাকস্বাধীনতা নাকি সীমালঙ্ঘন?

ধর্মীয় অবমাননা: বাকস্বাধীনতা নাকি সীমালঙ্ঘন?
ধর্মীয় অবমাননা: বাকস্বাধীনতা নাকি সীমালঙ্ঘন? ছবি: ‍নিউজনেস্ট

হামদ-সানা পরবর্তী আলোচনা—রমজানুল মোবারক এবং রমজানুল মোবারকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিধান: একটি হলো দিনের বেলায় রোজা রাখা, আর অন্যটি হলো রাতের বেলায় তারাবির নামাজ আদায় করা। এছাড়াও বাকি ১১ মাসের মতো তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। এগুলো সবই ইসলামের মৌলিক বিধান এবং ইসলামের নিদর্শন। কালিমা, নামাজ, হজ, জাকাত, কুরআনুল কারীম, কুরআন তেলাওয়াত, কুরআনের মাদরাসা—এগুলোকে বলা হয় ‘শা’আইরুল ইসলাম’ বা ইসলামের নিদর্শন বা প্রতীক। যখন রমজান মাস বা রমজানের রোজার কথা বলা হয়, তখনই বোঝা যায় এটি একটি মুসলিম দেশ, এরা সবাই মুসলিম উম্মাহ। একইভাবে কালিমা, নামাজ, হজ, জাকাত ইত্যাদিও ইসলামের প্রতীক। কালিমা হলো—
أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمداً عبده ورسوله
অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল।

আল্লাহ তায়ালার নামের সম্মান, শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সম্মান, তাঁর নামের প্রতি ভালোবাসা, এবং তাঁর আগে আল্লাহ যত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন, তাদের নামের প্রতি ভালোবাসা—এগুলো ঈমানের অংশ। একইভাবে ইসলামের যত নিদর্শন আছে, যেমন মিসওয়াক। এটি ফরজ নয়, সুন্নত, কিন্তু এটি ইসলামের নিদর্শন। মিসওয়াকের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর পরিচয় পাওয়া যায়। টুপি মাথায় দেওয়া ফরজ নয়, কিন্তু এটি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর পরিচয় বহন করে। এ ধরনের সব বিধানের প্রতি একজন মুমিনের অন্তরে সম্মান থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ
(সূরা আল-হজ্জ, আয়াত: ৩২)

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মর্যাদা বৃদ্ধি করে, তা হৃদয়ের তাকওয়ার পরিচয়। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের যত বিধান ও নিদর্শন রয়েছে, সেগুলোকে শা’আইরুল্লাহ বা আল্লাহর নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান দেখায়, তার অন্তরে ঈমান, তাকওয়া ও ইখলাস আছে বলে বুঝা যায়। আর যদি কেউ ইসলামের এই নিদর্শনগুলোর প্রতি সম্মান না দেখায়, বরং অবমাননা করে বা এগুলো নিয়ে কটুক্তি করে, তাহলে বুঝতে হবে তার অন্তরে ঈমান ও তাকওয়া নেই। তার অন্তর ঈমান ও তাকওয়াশূন্য। এই সূরার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:
وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর হারামকৃত বিষয়গুলোর মর্যাদা রক্ষা করে, তা তার জন্য তার রবের কাছে কল্যাণকর। আল্লাহ তায়ালা যেসব বস্তু, বিধান বা ব্যক্তির সম্মান রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন, যে ব্যক্তি সেগুলোর সম্মান রক্ষা করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর যে ব্যক্তি এগুলোর সম্মান রক্ষা করবে না, তার দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই ধ্বংস হবে। বাইতুল্লাহ শরীফ এবং পুরো হারাম শরীফও আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা এগুলোকে ‘শা’আইরুল্লাহ’ ও ‘হুরুমাতুল্লাহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। সূরা হজ্জের ৩০ ও ৩২ নম্বর আয়াতে এই দুটি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং বুঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা যেসব বিষয়, বস্তু ও বিধানকে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন, সেগুলোর সম্মান ও আদব রক্ষা করতে হবে। আদব রক্ষা করলে তা তোমাদের জন্যই কল্যাণকর, আর আদব রক্ষা না করলে তা তোমাদের জন্যই ক্ষতিকর। যদি কথা, কাজ ও মনে থেকে সম্মান দেখানো হয়, তাহলে বুঝা যাবে তোমার অন্তরে ঈমান ও তাকওয়া আছে। এগুলো ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেগুলোকে আমরা ‘শা’আইরে ইসলাম’ বলে জানি। ইসলামের নিদর্শনাবলীর মধ্যে কোনো কিছু বা কোনো ব্যক্তিকে যদি কেউ অসম্মান বা অবমাননা করে, তাহলে তার মধ্যে ঈমান ও তাকওয়া নেই। নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), যিনি খাতামুল আম্বিয়া, তিনিও ইসলামের নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি নবীদের ব্যাপারে কটুক্তি করে, তার ঈমান ও তাকওয়া নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ব্যাপারে কটুক্তি করে, তারও ঈমান ও তাকওয়া নেই। তার দ্বীন, ঈমান ও তাকওয়া শূন্য।

ইসলাম আমাদেরকে কি শেখায় দেখেন! যে লোকরা এরকম ইসলাম, ধর্ম, নবিজী, আল্লাহ, কুরআন, হাদিস, শরীয়ত, শরীয়তের বিধান নিয়ে যারা কটুক্তি করে তারা বিভিন্ন ওয়াজ করে আমাদেরকে। মুসলিম উম্মতকে ওয়াজ করে। কী কী ওয়াজ করে? বাকস্বাধীনতার ওয়াজ করে, মতামতের স্বাধীনতা, আরও কত নসিহত করে। এই নসিহত করনেওয়ালারা এরা যদি একটু কুরআন পড়তো! আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমের মধ্যে বলেন—

وَلَا تَسُبُّوا۟ ٱلَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّوا۟ ٱللَّهَ عَدْوًۢا بِغَيْرِ عِلْمٍۗ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرْجِعُهُمْ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ

(হে মুসলিমগণ!) তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে (ভ্রান্ত মাবুদদেরকে) ডাকে, তোমরা তাদেরকে গালমন্দ করো না। কেননা পরিণামে তারা অজ্ঞাতবশত সীমালংঘন করে আল্লাহকেও গালমন্দ করবে। (এ দুনিয়ায় তো) আমি এভাবেই প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে সুশোভন করে দিয়েছি। অতঃপর তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের কাছেই ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে তারা যা-কিছু করত সে সম্বন্ধে অবহিত করবেন। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত: ১০৮)

কাফের মুশরিকরা সত্য মাবুদ আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীনকে মানে না। ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ। সত্য মাবুদ একমাত্র আল্লাহ। সত্য মাবুদকে মানে না। কিন্তু মুশরিকদের মাবুদদের কি অভাব আছে? মিথ্যা মাবুদ, বাতিল মাবুদ, সে বাতিল আর মিথ্যাকে মাবুদ বানিয়ে রেখেছে, নিজের নফসকে মাবুদ বানিয়ে রেখেছে, শয়তানকে মাবুদ বানিয়ে রেখেছে, কিন্তু সত্য মাবুদ রাব্বুল আলামিনের ইবাদত করতে রাজি নাই। আল্লাহকে মানতে রাজি নাই। আল্লাহর উপর ঈমান আনতে রাজি নাই। তো এই কাফির মুশরিকরা যে বাতিল মাবুদদের ইবাদত করছে, সে ইবাদত ও বৃথা। তাদের মাবুদও মিথ্যা। কিন্তু ওই মিথ্যা মাবুদদের প্রতি তাদের একটা দুর্বলতা আছে। এরপরও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘এ মুশরিকরা আল্লাহ ছাড়া আরো যাদের ইবাদত করে প্রার্থনা করে তোমরা তাদের গালি দিও না তাদের প্রতি কটুক্তি করো না, গালমন্দ করো না (৬:১০৮ আয়াত।) ওইটাকে বাতিল এটা বলতে হবে এবং এ বাতিল মাবুদের ইবাদত বৃথা— এটা জানাতে হবে। শিরিকে কোন মুক্তি নাই। শিরিকে হলো জাহান্নাম। জান্নাতের রাস্তা হল তাওহীদের রাস্তা। এটা জানাবেন। ঈমানের প্রতি দাওয়াত দাও। ইসলামের প্রতি দাওয়াত দাও। শিরিক থেকে দূরে থাকতে বলো, বেঁচে থাকতে বলো। তুমি তোমার দাওয়াতের কাজ করো। এবং শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে যারা জালেম মুশরিক কাফির তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও আপত্তি নেই। কিন্তু সাধারণ কথাবার্তাতে আলোচনাতে ওদের গালি দিও না। গালি দেওয়া এটা ভালো না। বাতিল মাবুদকে যদি তুমি গালি দাও তাহলে তারা সেটার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আল্লাহকে গালি দিবে, নাউজুবিল্লাহ! এটা তো ভালো হলো না।

ইসলাম তো শিখায় ওই মাবুদ বাতিল ওই মাবুদের এবাদত ও বাতিল। জাহান্নামের কাজ; কিন্তু তাদেরকে গালি দিও না—এটা হল ইসলামের শিক্ষা। আর যারা আমাদেরকে নসিহত করে বাক স্বাধীনতার এবং মতামতের স্বাধীনতার৷ এতোটুকু ভদ্রতাও তাদের মধ্যে নেই! তোমার কিসমতে যদি তাহাজ্জুদ না থাকে তাহাজ্জুদ নিয়ে তোমার এত জ্বালাপোড়া কেন? তাহাজ্জুদের কটুক্তি করতে হবে কেন তোমার? তোমার কিসমতে যদি আখেরি নবীর শ্রেষ্ঠ নবী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনার সৌভাগ্য যদি তোমার না হয়; কিন্তু এত মাথা ব্যথা কেন যে কটুক্তি করতে হবে!

এখন একজন ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে যে উনার তাহাজ্জুদের কটুক্তি করা উদ্দেশ্য ছিল না উনার উদ্দেশ্য হলো তাহাজ্জুদের আড়ালে যারা ভন্ডামি করে। ওদের উনি সমালোচনা করেছেন তাহাজ্জুদের সমালোচনা করেন নাই। কোনো ব্যক্তি যদি তাহাজ্জুদের সমালোচনা করে, তাহাজ্জুদ্দের ব্যপারে কটুক্তি করে উপহাস করে, এরপর এটাকে আড়াল করার জন্য এরকম ব্যখ্যা দাড় করায়, সে ভন্ড কি ভন্ড না? ভন্ডামি তো হলো প্রতারণা। তুমি তো প্রতারণা করছো। তোমার বক্তব্য পড়লেই বুঝা যায়। কেউ পড়বেন না! কেউ শেয়ার করবেন না এধরণের জিনিস! নাউজুবিল্লাহ বলবেন! শেয়ার করবেন না, এধরণের জিনিস শেয়ার করা হয়না, করা যায়না। এরকম কুফুরি কথা, মুনাফেকি কথা শেয়ার করা ঠিক না। আপনার মোবাইলে এসে গেছে, আপনি আরও দশজনকে পাঠাবেন? নাহ! পাঠাবেন না। আপনি জায়গামতো বলে দেন। যারা এটার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাদের জিম্মাদারি, তাদেরকে বলে দেন। এগুলা শেয়ার করবেন না। এটা শেয়ার করাও গুনাহ। এধরণের কুফুরি কথা শেয়ার করাও কি? গুনাহ।

তো এখন— সে তাহাজ্জুদের কটুক্তি করছে, কিন্তু বলছে ‘না। উনি ভন্ডদের।’ কারা ভন্ড? তাহাজ্জুদ পড়লেওয়ালা ভন্ড? (নাহ)। তো কার ভন্ডামি? আপনি… ভন্ডামির প্রতিবাদ করছেন? ভন্ডামির প্রতিবাদ করলে ভন্ডামির প্রতিবাদ করেন, তাহাজ্জুদকে আনতে হবে কেন এর মধ্যে? তাইলে সে, সে তার অপরাধ, ইসলাম নিয়ে উপহাস করা, ইসলামের বিধান নিয়ে উপহাস করা, ধর্ম নিয়ে উপহাস করা, এই অপরাধকে আড়াল করছে কী বলে— যে আমি ভন্ডদের ব্যাপারে বলেছি। এরকম নিজের অপরাধ কে আড়াল করা, এটা প্রতারণা কি-না? ভন্ডামি কি-না?

ভাইয়েরা আমার! ঈমান মজবুত রাখতে হবে। ঈমান নিয়ে কোন আপোষ হয় না। ঈমান নিয়ে কী হয়না? আপোষ হয়না। ইসলামি আক্বিদা, ইসলামী বিধান, শা’আয়েরে ইসলাম এবং হুরুমাতুল্লাহ সম্পর্কে কোন আপোষ হয় না। আল্লাহ তায়ালা এগুলোর নামই রেখেছেন শা’আয়েরে ইসলাম ও হুরুমাতে ইসলাম। ইসলামের কোন বিধান নিয়ে, ছোট থেকে ছোট বিধান, মুস্তাহাব, সুন্নত হোক আর ফরজ, ওয়াজিব হোক। কোন বিধান নিয়ে; বিশেষ করে যেটা একবারে শা’আয়েরের এর পর্যায়ে, ঐ ধরনের কোন বিধান নিয়ে উপহাস, যেকোনো ধরনের উপহাস— এটা কুফুরি। এটা মুনাফেক দের কাজ এবং জিন্দিকদের কাজ। মুলহিদদের কাজ। এটা কোন মুসলিমদের কাজ হতে পারে না।

শুধু ইসলামী হুকুমতওয়ালা সরকার না, যদি ইসলামী খেলাফত থাকে, ইসলামি হুকুমত থাকে, শুধু সে সরকার এর দ্বায়িত্ব- এ পড়ে; শুধু তা না, মুসলিম দেশের সরকারের দ্বায়িত্বে পড়ে; এমনকি অমুসলিম দেশের সরকারের দ্বায়িত্বেও পড়ে—এধরণের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা। এ ধরনের লোকদের উপযুক্ত বিচারের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া— এটা যে কোনো সরকারের দায়িত্ব। আমেরিকাতে কেউ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবমাননা করবে, লন্ডনে— বা অন্য যে কোন জায়গায়, যে কোন দেশ, অমুসলিম হোক না কেন, সেখানে যদি কেউ ধর্মের উপর আঘাত করে। এমনকি যে ধর্ম এখন বিকৃত এবং রহিত। ওই ধর্মেরও যদি কেউ অবমাননা করে, সেটা ওই দেশে অপরাধ কি অপরাধ না? শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিনা? অপরাধ। স্বাভাবিক বিষয় এটা। তো আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘কাফের মুশরিকদের মাবুদদেরকে তোমরা গালি দিওনা।’

তাদের ধর্ম বাতিল। কিন্তু ওই ধর্মের যদি কেউ উপহাস করে, সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তোমরা কী বাকস্বাধীনতার উপদেশ দিবা আমাদেরকে? স্বাধীনতা, যেটা বাস্তবে স্বাধীনতা। ঐ স্বাধীনতার ছবক কুরআন থেকে নেন। ইসলাম থেকে গ্রহণ করেন। ইসলাম, ইসলামী শরীয়ত, ইসলামের নবী তারাই দিতে পারবেন আপনাকে স্বাধীনতার সবক। অন্য যারা স্বাধীনতা, স্বাধীনতা করে ওরা স্বাধীনতার অর্থও বুঝে না। সেজন্য স্বাধীনতা নানা মানুষকে জিম্মি করে রাখে গোলাম করে রাখে।

সব সরকারের দায়িত্ব এটা। দলীয় সরকার হোক আর এখন এর মত সরকার হোক। মুসলিম সরকার হোক আর অমুসলিম সরকার হোক। সব সরকারের দায়িত্ব এ ধরনের বিশৃঙ্খলা বন্ধ করা। এবং এই অপরাধের অপরাধীদেরকে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া। এ বিষয়ে কোন ধরনের অবহেলা এটা তাওহীদি জনতা বরদাশত করে না।

এখন তো তাওহীদি জনতা শব্দ নিয়েও উপহাস করছে। তাওহীদ, তাওহীদি জনতা, মুসলিম উম্মাহ, এগুলাও “মিন শা’আয়িরিল্লাহ, মিন হুরুমাতিল্লাহ”। এগুলাও আল্লাহর শা’আয়ের, আল্লাহর হুরুমাতের মধ্যে। এসব বিষয়ও ইসলামের শা’আয়ের-এর অন্তর্ভুক্ত। তাওহীদি জনতা নিয়ে কেউ উপহাস করবে, তাওহিদী জনতার প্রতিবাদ নিয়ে উপহাস করবে, তার অন্তর তাকওয়াশূন্য ঈমানশূন্য। এসব বিষয়ে উপযুক্ত, যথাযথ এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। সব জিনিস নিয়ে অবহেলা করা যায় না, বিলম্ব করা যায়না।

এই যে সংস্কার চলছে। ঠিক না বেঠিক? চলছে কিনা দেশে? বর্তমান সরকার সংস্কার এর কাজ হাতে নিয়েছে কি না? তো সংস্কারের প্র‍থম কাজ কী, জানেন? সংস্কারের প্রথম সারির যে কাজগুলো কি ঐ কাজগুলোর মধ্যে — রাসুল অবমাননাকারী, ধর্ম অবমাননাকারী, ইসলামের কোন একটা নিদর্শনের অবমাননাকারী, তাদের বিচার, তাদের বিচারকে নিশ্চিত করা, এটা হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার। সবকিছু করা হলো কিন্তু এটা করা হলো না তাহলে হবে না। এবং এটা মনে রাখতে হবে।

শাআ’য়েরে ইসলাম—মসজিদ, মাদ্রাসা, বায়তুল্লাহ, মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী, মসজিদে আকসা, বায়তুল মাকদিস। সকল মসজিদ, সকল মাদ্রাসা, যেখানেই আল্লাহর কথা হয়, দ্বীনের শিক্ষা হয়, কুরআনের তালিম হয়, হাদীসের দরস হয় এই সবগুলোই হলো ইসলামের নিদর্শন। এই গুলো কী? এগুলো হলো ইসলামের নিদর্শন। শাআ’য়ির’ অর্থ নিদর্শন। শাআ’য়েরে ইসলাম মানে হলো ইসলামের নিদর্শন। আর ‘শাআ’য়িরুল্লাহ” মানে হলো আল্লাহর নিদর্শন। সংক্ষেপে বলতে পারেন শাআ’য়েরে ইসলাম।

এই যে রমজান মাস, রমজান বা রোজা নিয়ে উপহাস করে কিনা? বুদ্ধিজীবীরা? কুরবানি নিয়ে উপহাস করে কিনা? কুরবানির বিপক্ষে লিখতে গিয়ে ইসলামের উপহাসকারী, মুরতাদ নাস্তিক টাইপের মানুষ। এদেশে না। আরেক দেশে বসে এদেশে লেখা পাঠায় পত্রিকায়। কুরবানি সম্পর্কে একবার লিখেছে, হাল চাষ করবে কেমনে, যদি এভাবে গরু কুরবানি করতে থাকে? বুঝতে পেরেছেন? কী বুদ্ধিজীবী? হাল চাষ করবে কিভাবে মানুষ? হুজুর দেখে বলে হুজুররা আদিকালের মানুষ। আধুনিকতা কিচ্ছু জানেনা। উনি এই যুগে বসে বলতেছেন গরু কুরবানি করলে মানুষ হাল চাষ করবে কেমনে? এই যুগে বসে উনি এই কথা বলেন। এটা কি হাল চাষের প্রতি উনার মায়া? নাকি কুরবানির প্রতি উপহাস? কুরবানি পছন্দ না, যাকাত পছন্দ না, সদকা-খায়রাত পছন্দ না, হজ পছন্দ না, একেকজন একেকটা নিয়ে উপহাস করে। এবং তাদের উপহাসের যদি প্রতিবাদ করা হয় তাহলে সেটা নিয়েও উপহাস করে। খবরদার! উপহাস করা ভালো মানুষের কাজ না। আমি বলিনি মুসলমানের কাজ না। মুসলমানের কাজ তো নয়ই, যে উপহাস করে সে মুসলমান হয় কি করে? যে এরকম করে, ইসলামের কোন কিছু নিয়ে উপহাস করে, তার মধ্যে কি ইসলাম-ঈমান আছে? অসম্ভব। আমি বলি না, এরকম ধর্ম নিয়ে, ধর্মের কোন প্রতীক নিয়ে উপহাস করা, এটা মুসলমানের কাজ না। এ কথা আমি বলি নাই। এটা মুসলমানের কাজ হয় কিভাবে আবার? এটা তো বলা লাগে না। আমি বলেছি এটা মানুষের কাজ না। যে এরকম করে মানুষের কাতারে তার থাকার কোন অধিকার নাই।

রমজান মাস। রমজানের সম্মান রক্ষা করতে হবে। যার শরীয়ত ওজর দিয়েছে, কঠিন অসুস্থ, রোজা রাখতে পারছে না, সফরের হালতে আছে, রোজা না রাখার আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন। পরে কাযা করবে। একবারে মাজুর হয়ে গেছে, এমন সুস্থ হবে যে পরে কাজা করতে পারবে— এমন সম্ভাবনাও নাই, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।

তাে যে আয়াতগুলো পড়লাম খুতবাতে, আজকে তো আর তরজমা করি নাই, ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তৌফিক দিলে আগামী জুম্মায় হবে। ওই ধরনের ওজর হলে, ওজরের বিধান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন, সেই বিধান অনুযায়ী আমল করতে হবে। নতুবা সবার জন্য রোজা ফরজ। বালেগ পুরুষ মহিলা সবার জন্য রোজা ফরজ। এই যে হোটেলগুলো খোলা থাকে, এই যে দোকানগুলো খোলা থাকে, চায়ের দোকানগুলো খোলা থাকে, একেবারে খোলামেলা, চা খাচ্ছে। কত স্টার আছে আল্লাই জানে, আমি যদি বলি ফাইভ স্টার, এরপরে আরো কত স্টার আছে, আমি তো জানিনা, যত ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে সেগুলো বন্ধ থাকবে। এটা সাধারণ কথা, যে কোন মুসলমান বুঝে এগুলো বন্ধ থাকবে। এটার উপরে এক বুদ্ধিজীবী প্রতিবাদ করেছে কি জানেন? মুসাফির কী করবে? মুসাফিররা কোথায় খাবে? এজন্য হোটেলগুলো খোলা রাখতে হবে। এ কি রোজাদার? এরকম বাদরামি করে তারা। মুসাফিররা কোথায় খাবে? মুসাফির খেতে হলে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখতে হবে?

খবরদার! ভাইয়েরা আমার, রমজানের সম্মান রক্ষা করতে হবে। রোজা যেমন ফরজ, রমজানের সম্মান রক্ষা করাও ফরজ। এবং খুব গুরুত্বের সাথে তারাবীহ, খতম তারাবীহ আদায় করতে হবে। তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, এগুলো তো কোরআন খতম করার জন্য।
যেখানে আমি হাফেজ পাচ্ছি, তারাবীহতে খতম করতে পারছি কুরআনুল কারীমের—সেটাকে আমি প্রাধান্য দিব। যদি ওজর থাকে, এমন কোনো এলাকা থাকে, হাফেজ পাচ্ছেন না–তবে হাফিযের কোন অভাব নেই, আলহামদুলিল্লাহ–তবে যদি কোথাও এরকম হয়, হাফেজ পেলেন না, নিজেরাও হাফেজ না, তাহলে যতটুকু পারি কুরআন থেকে পড়ি। তবে বিশ রাকাত তারাবি আদায় করবো। আর তাহাজ্জুদ আবার বারো মাসের নামাজ কিন্তু। তাহাজ্জুদ শুধু রমজানের না। তবে হ্যাঁ, কোনো আল্লাহর বান্দা যদি তারাবীহর নামাজ সারারাত ভরে পড়ে, শুরু করেছে, পড়তে পড়তে একবারে সেহরির আগ পর্যন্ত পড়েছে, তাহলে তার আলাদা করে তাহাজ্জুদ পড়ার দরকার নাই। তবে যদি এমন হয় ২০ রাকাত তারাবীহ আমি আগের রাতে পড়ে ফেলেছি, তাহলে শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়বো। তাহাজ্জুদ সুন্নত। আর তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তাহাজ্জুদ সুন্নতে মুয়াক্কাদার পরে সর্বোচ্চ নফল। তবে তারাবীহর নামাজ, যেটা কিয়ামু রামাদান, এটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন وسننت لكم قيامه। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে রমজানের হক আদায় করার তৌফিক দান করেন এবং গুরুত্বের সাথে রোজা তো রাখবোই, রোজার হক আদায় করে রোজা রাখব। আর, রোজার আদব রক্ষা করা; রোজার গুরুত্বপূর্ণ আদব হল, রোজাদার গীবত করবে না। গীবত গুনাহ। গীবত সব সময় গুনাহ। রমজানেও গোনাহ, রমজানের বাইরেও গুনাহ। তবে রোজা রেখে গীবত করা আরো বেশি গুনাহ। বড় গুনাহ। রোজার বরকত নষ্ট করে দেয় এরকম যেকোনো গুনার কথা, গুনার কাজ, রোজার বরকত নষ্ট করে দেয়। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সব সময় গুনাহ থেকে হেফাজত থাকার তৌফিক দান করুন।

ওয়া আখিরু দা’ওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

টিম নিউজনেস্ট
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত