রমজানে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় একসঙ্গে অনেক কিছু খেতে ইচ্ছে করে। তবে ভারী খাবার দিয়ে ইফতার শুরু করলে অনেক সময় ক্লান্তি, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও হজমের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, ইফতার শুরু করা উচিত খেজুর ও পানি দিয়ে। এটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। খেজুর শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়, আর পানি শরীরকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

খেজুরের পুষ্টিগুণ
খেজুর বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ফল, যা পুষ্টিগুণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। বাজারে সাধারণত শুকনো খেজুর বেশি পাওয়া যায়, তবে তাজা খেজুরও মাঝে মাঝে আমদানি হয়।
দুটি শুকনো খেজুরে যা থাকে:
১ গ্রাম প্রোটিন
৩ গ্রাম ফাইবার
২৭ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি
৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
এছাড়াও খেজুরে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। বিশেষ করে যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি দারুণ উপকারী।
বাংলাদেশের খাদ্যাভ্যাসে প্রচুর ভাজাপোড়া খাবার থাকে, যা ইফতারে খাওয়া হলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে খেজুরের ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।

পানির গুরুত্ব
সারাদিন রোজা রাখার পর শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই ইফতারের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঠান্ডা পানির পরিবর্তে স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা কুসুম গরম পানি খাওয়া ভালো, কারণ এটি হজমে সহায়ক।
পানিশূন্যতা থাকলে ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে গরমের সময় বাংলাদেশে রোজা রাখলে শরীরে পানি ও লবণের ঘাটতি হতে পারে। তাই শুধু ইফতারেই নয়, সারা রাত পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
নেফ্রোলজিস্ট (কিডনি বিশেষজ্ঞ) ডা. লামা নাজাল বলেন, ‘যারা পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, তাদের দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই ইফতারের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত শরীর আর্দ্র রাখা জরুরি।’
ইফতারের সঠিক পদ্ধতি
খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করার পর কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এরপর হালকা খাবার, যেমন স্যুপ বা ফলমূল খেলে শরীর সহজেই তা হজম করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারী খাবার ধীরে ধীরে খাওয়া উচিত এবং বেশি তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। ইফতারের সময় প্লেটের অর্ধেক অংশ শাকসবজি ও সালাদ দিয়ে ভরার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। এক চতুর্থাংশ রাখা যেতে পারে জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন লাল চালের ভাত বা ওটস, আর বাকি এক চতুর্থাংশ প্রোটিন, যেমন মাছ, মুরগি বা ডাল।
রমজানে খাবারের জন্য সময় সীমিত থাকে, তাই ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করলে শরীর সহজেই রোজার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে, যা আপনাকে সারাদিন সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।
সূত্র: বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট