আরাকানের বুথিডাং শহরে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির হাতে আটক রোহিঙ্গা যুবকদের ভাগ্য এখনো অনিশ্চিত। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি দাবি করছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। অথচ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির বুথিডাং দখলের আগেই। তখন সামরিক বাহিনী জান্তা রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের ব্যবহার করে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায়। সেনারা তাদের হাতে ব্যানার ধরিয়ে দেয়, তাতে লেখা ছিল— ‘আমরা মায়ানমারে আরাকান আর্মির সন্ত্রাস চাই না।’
শুধু তাই নয়, সেনারা জোর করে রোহিঙ্গাদের দিয়ে বুথিডাংয়ের রাখাইন সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি অনেক রোহিঙ্গা যুবককে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করে এবং সামনের সারিতে পাঠিয়ে দেয় যুদ্ধ করার জন্য।
ভয় ও নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের কোনো উপায় ছিল না। সন্ত্রাসী সেনাদের আদেশ মানতেই হয়েছে। পরে যখন আরাকান আর্মি বুথিডাং দখল নেয়, তখন তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে অন্তত ৩০০ রোহিঙ্গা যুবককে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা জান্তা বাহিনী, আরসা বা আরএসও-র হয়ে লড়াই করেছে।
২০২৫ সালের শুরুর দিকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি মাত্র ৫% বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু বাকি ৯৫% যুবক এখনো নিখোঁজ। পরিবারগুলো তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না।
এক বন্দির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
২০২৪ সালের শেষ দিকে মুক্তি পাওয়া এক রোহিঙ্গা যুবক, যিনি বুথিডাংয়ের ‘হুন নিউ লেক’ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এএনএ-কে জানান, আমি জানি না বাকিদের কোথায় রাখা হয়েছিল। আমাদের ৫০ জনকে একসঙ্গে রাখা হয়েছিল একদম কারাগারের মতো!
তিনি বলেন, ‘আমাদের নামাজও পড়তে দেওয়া হয়নি। দিনে একবার শুধু ভাত খেতে দেওয়া হতো। তারা যা বলত, আমাদের তা-ই করতে হতো। আমরা পাঁচজন ছাড়া বাকিদের কেউ মুক্তি পায়নি। আমাদের নানা উপায়ে নির্যাতন করা হয়েছে। কোন কারণ ছাড়াই মারা হয়েছে। তারা আমাদের ক্ষুধার্ত রেখেছে এবং ধর্মীয় কার্যকলাপ করতে দেয়নি।’
সম্প্রতি বুথিডাংয়ের ‘ওহলা ফাই’ গ্রামে নতুন করে তিনজন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি। তারা কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় এই ঘটনা ঘটে।
এ মাসেই তারা ১২টি রোহিঙ্গা গ্রামে দখল অভিযান চালায়। রোহিঙ্গাদের জমি ও কৃষিখামার কেড়ে নেয়। হঠাৎ করেই তিনটি রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়। যার ফলে অন্তত ৫০০টি বাড়িঘর পুড়ে যায়।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বর্তমানে আরাকানের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। যার মধ্যে রোহিঙ্গাদের গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু, বুথিডাং ও রাথিডাং রয়েছে। এসব এলাকায় তারা ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকের বসতভিটা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি জোরপূর্বক গৃহত্যাগ, বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তারা রাখাইন রাজ্যের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কিন্তু এই যুদ্ধের ফলে রোহিঙ্গারা আরও বেশি সহিংসতা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, নিপীড়ন এবং উভয় পক্ষের দ্বারা বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের শিকার হচ্ছেন।
সূত্র: এএনএ







