লেখক: আলতাফ হুসেইন ওয়ানি
হিমালয়ের আকাশছোঁয়া পর্বতমালাগুলো দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরোধ, স্বাধীনতা আর এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে ছিল। কিন্তু আজ, জম্মু ও কাশ্মীর (জে অ্যান্ড কে)-এ সেই চিত্রটা ক্রমেই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরে (জে অ্যান্ড কে) মানুষ নিজের কথা বললেই তাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকার ‘উন্নয়ন’-এর নাম করে কাশ্মীরের জমি আর সম্পদ অবৈধভাবে দখলে নিয়ে নিচ্ছে। আর যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের জেলে পাঠানো হচ্ছে।
২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়। এর ফলে কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর থেকেই সরকার এখানে নানা প্রকল্প শুরু করেছে। বিশেষ করে খনিজ আর বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প।
এদিকে কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় লিথিয়াম খুঁজে পাওয়া গেছে। এই লিথিয়াম দিয়ে ব্যাটারি বানানো যায়। যা ভবিষ্যতের ‘সবুজ জ্বালানি’-র জন্য দরকার। কিন্তু সরকার অতি গোপনে খুব তাড়াতাড়ি এই খনি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। সালাল গ্রামে শুরুতে মানুষ খুশি ছিল। এখন তারা ভয় পাচ্ছে। কেননা এতে ঘরবাড়ি ছাড়তে হতে পারে। এই ঘটনা ঔপনিবেশিক যুগের সাথে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে: সরকার নেয় সম্পদ, আর স্থানীয়রা হারায় সব কিছু।
এই সমস্যা নতুন নয়। চেনাব উপত্যকায় বড় বড় বাঁধ তৈরি হচ্ছে। রাজা মুজাফফর ভাট দেখিয়েছেন, এই বাঁধ বানানোর জন্য কৃষকদের জমি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। অনেক গাছপালা ও প্রাণীর বাসস্থান নষ্ট হয়েছে। মানুষদের জীবিকা হারিয়ে গেছে। তারপরও সরকার এগুলো বন্ধ করছে না।
আরও খারাপ খবর হলো—যারা এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, তাদেরই ধরা হচ্ছে। বন্দি করা হচ্ছে কারাগারে। কিশতওয়ারে পাঁচজন শ্রমিক নেতাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে এক কঠোর আইন। আর তা হলো পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট (PSA)।
ডোডা জেলায় রেহমতুল্লাহ আহমেদ নামে এক পরিবেশকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার অপরাধ— তিনি শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন,বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা। এই ধরণের আচরণ পুরো কাশ্মীরজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে।
এইভাবে হিমালয় যেন আজ আর কিছু বলছে না। সে পুরোই নীরব! তার নীরবতা যেন বলে—প্রতিবাদ করলে কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়া হবে। কাশ্মীরের মানুষ এখন নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলতেও ভয় পায়।
সূএ: কেএমএস
উপমহাদেশ ডেস্ক
- উপমহাদেশ ডেস্ক#molongui-disabled-link
- উপমহাদেশ ডেস্ক#molongui-disabled-link
- উপমহাদেশ ডেস্ক#molongui-disabled-link
- উপমহাদেশ ডেস্ক#molongui-disabled-link