রোহিঙ্গা মসজিদ বন্ধসহ নারীদের জোরপূর্বক সেনায় নিয়োগ দিচ্ছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি!

রোহিঙ্গা মসজিদ বন্ধসহ নারীদের জোরপূর্বক সেনায় নিয়োগ দিচ্ছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি!
রোহিঙ্গা মসজিদ বন্ধসহ নারীদের জোরপূর্বক সেনায় নিয়োগ দিচ্ছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি! ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিম মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বুথিডাং শহরে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তারা আরাকান রাজ্যের বিভিন্ন মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে, ধর্মীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে এবং ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারীদের সামরিক প্রশিক্ষণে বাধ্য করছে।

বুথিডাংয়ের কিন তাউং গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ২০২৪ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি গ্রামের সব মসজিদ ধ্বংস করে ফেলে। পরে গ্রামবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছোট ছোট মসজিদ পুনর্নির্মাণ করলেও, আরাকান বাহিনী সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং পুনরায় গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

একজন গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা নামাজ পড়ার সুযোগ পাচ্ছি না। যদি কেউ একত্রিত হয়ে ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠান পালন করতে চায়, তবে তাকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।’

ধর্মীয় নিপীড়নের পাশাপাশি, আরাকান আর্মি স্থানীয় মুসলিমদের কবরস্থান ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বৌদ্ধ মন্দিরসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত কবরস্থান ও কৃষিজমি জবরদখল করে তারা সেগুলোকে নিজেদের জন্য ব্যবহার শুরু করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে ফেলার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা।

এছাড়া সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি এখন রোহিঙ্গা নারীদের সামরিক প্রশিক্ষণে বাধ্য করছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব নারীকে ডেকে নিয়ে জানানো হয়েছে, সামরিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ তাদের জন্য বাধ্যতামূলক—অমান্য করলেই ভোগ করতে হবে গুরুতর পরিণতি।

২০২৪ সালের মাঝামাঝি বুথিডাং শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—বাড়িঘর জবরদখল, মূল্যবান সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, অসংখ্য পরিবারকে উচ্ছেদ, রাখাইন বৌদ্ধ পরিবারদের রোহিঙ্গা গ্রামে পুনর্বাসন এবং ধর্মীয় বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ।

পূর্বেও বহু রোহিঙ্গাকে ‘সন্ত্রাসী’ অপবাদ দিয়ে আটক, অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়েছে। অনেককে বন্দি করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রামে জোরপূর্বক উচ্ছেদ চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

একইসাথে অন্তত ৭০০ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে—যাদের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে—জোর করে সড়ক নির্মাণ, সামরিক ঘাঁটি ও তল্লাশি চৌকি তৈরির কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার থেকে একজন করে সদস্যকে বাধ্যতামূলক শ্রমে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাই তিনি তরুণ হন বা বয়স্ক।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি একটি পরিকল্পিত জাতিগত নিধনের রূপ নিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সমাজের তাৎক্ষণিক মনোযোগ ও হস্তক্ষেপ দাবি করে।

আমাদের ফলো করুন