দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ভাবনার প্রতিনিধিত্ব করে আবারও দৃঢ় কণ্ঠে আত্মপ্রকাশ করল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আজ শনিবার ২ই মে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে সংগঠনটি নারীর প্রকৃত অধিকার রক্ষা ও ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সাহসী ১২ দফা দাবি উত্থাপন করেছে।
হেফাজতের মতে, নারী স্বাধীনতার নামে বর্তমানে সমাজে যেসব ‘অসুস্থ প্রচার’ চলছে, তা আসলে নারীর প্রকৃত মর্যাদা নষ্ট করছে। হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা নারীদের শিক্ষা, সম্মান ও নিরাপত্তা চাই। তবে সেটা যেন ইসলামি আদর্শের বাইরে না যায়।’ এ কারণে আগামী তিন মাসে বিভাগীয় পর্যায়ে নারী অধিকার সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সমাবেশে যে ১২ দফা দাবি তোলা হয়েছে, সেগুলো কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, বরং দেশের ঈমানদার জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার এক সুসংগঠিত প্রয়াস। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
—নারী অধিকার কমিশন বাতিল করে আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন
—সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা পুনঃস্থাপন ও বহুত্ববাদ বাতিল
—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করে বিচার
—কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা
—প্রাথমিক শিক্ষায় ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা—২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার বিচার—‘আরাকান করিডোর’ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ সরকারের সরে আসার দাবি
—চিন্ময় দাসের জামিন বাতিল
—আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার
হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘ইসলামবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেবে না। আমরা আগেও প্রতিরোধ করেছি, এবারও করবো।’
দলটি জানায়, তাদের এই কর্মসূচি ও দাবিগুলোর পেছনে রয়েছে ‘ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, নারী অধিকার নিয়ে অপপ্রচার ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র।’
হেফাজতের এই আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়, বরং সমাজের নৈতিকতা, সংস্কৃতি ও ঈমানি আদর্শ রক্ষার এক জনভিত্তিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। যারা বিশ্বাস করে, ইসলাম শুধু নামাজ-রোজায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সর্বস্তরে তার বাস্তব প্রয়োগ জরুরি—তাদের কাছে হেফাজতের এই অবস্থান সময়োপযোগী এবং অপরিহার্য।