তারিখ প্রদর্শন

রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ভেঙে কাঠ লুট করে সামরিক ঘাঁটি গড়ছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি

রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ভেঙে কাঠ লুট করে সামরিক ঘাঁটি গড়ছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি
রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ভেঙে কাঠ লুট করে সামরিক ঘাঁটি গড়ছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। ছবি: সংগৃহীত

আরাকান রাজ্যের মংডু শহরের উত্তরের বিভিন্ন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামে জোরপূর্বক উচ্ছেদের পর ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে কাঠ লুট করে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে সশস্ত্র স্ন্ত্ গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’। স্থানীয়দের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে আরাকান নিউজ এজেন্সি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মংডুর মায়াও তাউং, নাগান চাউং ও গুন নার গ্রামে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে আরাকান আর্মি। এরপর কাঠের ঘরগুলো ভেঙে সেসব কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে গার্ড পোস্ট, বাঙ্কার এবং নতুন ব্যাটালিয়ন ভবন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর, মায়াও তাউং গ্রাম থেকে ১০০টিরও বেশি রোহিঙ্গা পরিবারকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়। এরপর আরাকান আর্মি তাদের কৃষিজমি ও মাছের খামার দখল করে সেগুলো স্থানীয় রাখাইনদের কাছে হস্তান্তর করে দেয়।

এছাড়া সামরিক স্থাপনা নির্মাণে রোহিঙ্গা বাড়িঘরের কাঠ ছাড়াও আশপাশের বনাঞ্চলের গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহ করা হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সিমেন্ট ও রড (রিবার) নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

নাগান চাউংয়ের গুন নার গ্রামেও একই চিত্র। সেখানে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে উচ্ছেদ করা হয় রোহিঙ্গাদের। ঘরবাড়ি ভেঙে তাতে ব্যবহৃত কাঠ, ছাদ, দরজা-জানালা দিয়ে নির্মাণ করা হয় পাহারার চৌকি ও সামরিক স্থাপনা।

এই উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের কৃষিজমিতে হানা দিয়ে তাদের ফলানো ফসলও লুট করেছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে হুমকি ও সহিংসতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিশোধের ভয়ে অধিকাংশ বাসিন্দাই নীরব থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

একজন মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘মিয়ানমারের পূর্ববর্তী সামরিক জান্তা সরকারের শাসন থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়ার পর রোহিঙ্গারা এখন আরাকান আর্মির মতো নতুন এক নিপীড়কের কবলে পড়েছে। ঘরবাড়ি ও জমিজমা ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হচ্ছে, সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে – এটি পুরনো শাসনের নিপীড়নেরই নতুন রূপ।’

২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি মংডুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, বিদ্বেষমূলক অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক রোহিঙ্গার ঘর সিল করে দেওয়া হয়েছে, জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে এবং বহু পরিবারকে আবারও বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।

এছাড়া আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের চলাচলের উপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। প্রতিটি রোহিঙ্গা গ্রামের প্রবেশ ও প্রস্থানে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি, যার ফলে তারা কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছেন।

আমাদের ফলো করুন