সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন দীন ইসলামের স্বর্ণযুগের মূল স্তম্ভ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্যে এসে ঈমান গ্রহণকারী এই মহান ব্যক্তিগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ইসলামের প্রচার, প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য।
তাঁরা ছিলেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা ও আদর্শের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। কুরআন কারিম ও হাদিসের প্রথম অনুসারী। সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ, আত্মনিবেদন ও সাহসিকতা ইসলামকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে ।
সাহাবায়ে কেরামের জীবন ছিল ঈমান, চরিত্র ও আদর্শিক শক্তির অনন্য উদাহরণ। সাহাবায়ে কেরাম থেকে আমরা শিখি, কীভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা, ত্যাগ এবং মানবিকতার মাধ্যমে জীবনে সঠিক পথ খুঁজে পেতে হয়। তাঁরা ইসলামের প্রথম দিশারি, যারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ যে সাহাবি ইন্তেকাল করেন, তিনি হলেন আবু তুফায়েল আমির ইবনু ওয়াসিলা আল লায়সি রাজিআল্লাহু আনহু।
মৃত্যুর সময় নিয়ে মতবিরোধ
ইতিহাসবিদদের মতে, আবু তুফায়ল রাজিআল্লাহু আনহু ১০০ হিজরিতে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। তবে অন্য সূত্র মতে, তিনি ১০২-১১০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন । আল্লামা ইবনে আসাকিরের মতে, তিনি হিজরি ১০১ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন ।
নবীজির সা. এর স্মৃতি: জীবনের বিশেষ অধ্যায়
আবু তুফায়েল রাজিআল্লাহু আনহুর জন্ম ৩য় হিজরিতে । তিনি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য অর্জন করেন । নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হজের সময় কাবা তাওয়াফ করতে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাওয়াফ করতে দেখেছি। তিনি একটি লাঠি দিয়ে রুকন স্পর্শ করেন এবং তা চুমু দেন।’
একবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন কি না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি দেখেছি। পৃথিবীতে এখন এমন কেউ জীবিত নেই, যে তাঁকে দেখেছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ফর্সা ও মনোমুগ্ধকর চেহারার অধিকারী ।’
আলি রা. এর সাথে জীবনযাত্রা
আবু তুফায়েল রাজিআল্লাহু আনহু ছিলেন আলি রাজিআল্লাহু আনহুর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। তিনি আলী রাজিআল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে হওয়া সব যুদ্ধে অংশ নেন এবং তার মৃত্যুর পর মক্কায় ফিরে যান।
জ্ঞান ও গুণাবলি
আবু তুফায়েল রাজিআল্লাহু আনহুর ব্যক্তিত্ব ছিল বহুমুখী। তিনি ছিলেন একজন বাগ্মী, কবি এবং জ্ঞানী ব্যক্তি। তার বুদ্ধিমত্তা ও কথোপকথনে ছিল অসাধারণ শৈলী। ওমর ও আলি রাজিআল্লাহু আনহুমার মতো মহান সাহাবিদের থেকে তিনি হাদিস সংগ্রহ করেছেন। তার বর্ণনাগুলো ইসলামের প্রাথমিক যুগের মূল্যবান দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
সাহাবি জীবনের শেষ অধ্যায়
আবু তুফায়েল রাজিআল্লাহু আনহু জীবনের শেষ সময় মক্কায় কাটান। সাহাবিদের মধ্যে তিনিই সর্বশেষ মৃত্যুবরণ করেন, যা তাঁকে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।
আবু তুফায়েল আমির ইবনু ওয়াসিলা রাজিআল্লাহু আনহু কেবল একজন সাহাবি নন, তিনি ছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের স্মৃতিচিহ্ন এবং ইসলামের ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী। তাঁর জীবন আমাদের জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
‘তিনি ছিলেন শেষ সাহাবি, কিন্তু তার জীবন আমাদের জন্য চিরন্তন শিক্ষা।’