হোয়াটসঅ্যাপ আধুনিক যুগের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। তবে এর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত হ্যাকাররা নতুন কৌশলে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করছে। ব্যবহারকারীর সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণই এক্ষেত্রে সুরক্ষার মূল বিষয়। কীভাবে বুঝবেন আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে এবং কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক..
হ্যাকড হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ
১. অজানা OTP বা লগইন নোটিফিকেশন
আপনার ফোনে হঠাৎ করে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে অজানা OTP বা লগইন চেষ্টার নোটিফিকেশন আসলে সতর্ক হোন। এটি হ্যাকিংয়ের প্রচেষ্টা হতে পারে। মনে রাখবেন, এই OTP কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
২. মেসেজ অদৃশ্য হওয়া বা ডেলিভারি সমস্যা
মেসেজ অন্যের কাছে পৌঁছাচ্ছে না বা হঠাৎ ডিভাইস থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে? এর পেছনে স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যারের ভূমিকা থাকতে পারে।
৩. অ্যাকাউন্ট ব্লকড হয়ে যাওয়া
হ্যাকড অ্যাকাউন্ট অনেক সময় ব্লকড হয়ে যায়। লগইন করতে গেলে যদি ‘This account is banned’ নোটিফিকেশন দেখেন, তখন দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
৪. সন্দেহজনক লিংক বা ফিশিং মেসেজ
হ্যাকাররা হ্যাকড অ্যাকাউন্ট থেকে ফিশিং লিংক ছড়ায়। অস্বাভাবিক মেসেজ বা সন্দেহজনক লিংক দেখলে সতর্ক থাকুন।
৫. অ্যাকাউন্ট লগইন লোকেশন পরিবর্তন:
হোয়াটসঅ্যাপের Device Management Tool থেকে চেক করুন, আপনার অ্যাকাউন্টে কোন অজানা লোকেশন থেকে লগইন হয়েছে কিনা।
৬. অস্বাভাবিক কার্যকলাপ
মেসেজ ‘পঠিত’ দেখানো অথচ আপনি পড়েননি, কিংবা কন্টাক্ট লিস্টে অচেনা নাম্বার যুক্ত হওয়া—এগুলো হ্যাকিংয়ের লক্ষণ হতে পারে।
৭. অপরিচিত ডিভাইস থেকে লগইন
Linked Devices অপশনে গিয়ে চেক করুন, কোনো অপরিচিত ডিভাইস লগইন করা আছে কিনা।
৮. প্রোফাইল তথ্য পরিবর্তন
প্রোফাইলের ছবি, নাম বা বায়ো পরিবর্তন হলে এটি হ্যাকড হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
৯. স্মার্টফোনের অস্বাভাবিক গতি
ফোন ধীর হয়ে যাওয়া, ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়া বা অতিরিক্ত গরম হওয়া স্পাইওয়্যারের উপস্থিতির ইঙ্গিত দিতে পারে।
হ্যাকিং থেকে সুরক্ষিত থাকার কার্যকরী উপায়
১. Two-Step Verification চালু করুন
হোয়াটসঅ্যাপের [Settings > Privacy > Two-Step Verification] থেকে একটি ৬ সংখ্যার পিন সেট করুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা।
২. Email Verification যুক্ত করুন
Two-Step Verification চালুর সময় ইমেইল যুক্ত করলে পিন রিসেট সহজ হয় এবং অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করা যায়।
৩. End-to-End Encryption নিশ্চিত করুন
যদিও এটি ডিফল্টভাবে সক্রিয় থাকে, তবুও সেটিংসে গিয়ে যাচাই করে নিন।
৪. সন্দেহজনক লিংক এড়িয়ে চলুন
অজানা লিংক বা মেসেজ খুলবেন না এবং কাউকে OTP শেয়ার করবেন না।
৫. অ্যাকাউন্ট লগইন নোটিফিকেশন চালু রাখুন
[Settings > Privacy > Linked Devices] থেকে নতুন ডিভাইস লগইনের নোটিফিকেশন চালু রাখুন।
৬. ফ্রিকোয়েন্ট ব্যাকআপ চালু রাখুন
Settings > Chats > Chat Backup থেকে নিয়মিত ব্যাকআপ চালু করুন। এটি তথ্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
৭. বায়োমেট্রিক লক সক্রিয় করুন
হোয়াটসঅ্যাপে Screen Lock চালু করতে পারেন। এটি [Settings > Privacy > Fingerprint Lock] থেকে সক্রিয় করা যাবে।
৮. রেপুটেড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন
আপনার ফোনে একটি ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস (যেমন Malwarebytes) ব্যবহার করে ম্যালওয়্যার চিহ্নিত করুন।
সতর্কতা আপনার রক্ষাকবচ
সাইবার ঝুঁকি এড়াতে সতর্কতা এবং সচেতনতা অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিজের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। হোয়াটসঅ্যাপের এই সুরক্ষা পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যাবে। নিজের তথ্য সুরক্ষিত রাখুন এবং যেকোন অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
