নিউজনেস্ট

অটোমান প্রভাব তুরস্কে কি পুনরায় ফিরে আসছে: দ্য ইউরোপিয়ান টাইমসের বিশেষ প্রতিবেদন

অটোমান প্রভাব তুরস্কে কি পুনরায় ফিরে আসছে: দ্য ইউরোপিয়ান টাইমসের বিশেষ প্রতিবেদন
ছবি: আলজাজিরা

সম্প্রতি ইউরোপের ভূ-রাজনীতি এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদের জন্য প্রসিদ্ধ সংবাদমাধ্যম দ্য ইউরোপিয়ান টাইমসের বিশ্লেষণধর্মী এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম রাষ্ট্রের অস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারীর ভূমিকায় তুরস্কের আবির্ভূত হওয়ায়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুরস্ক তার পূর্বের উসমানীয় প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে। মূলত প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের অভাবনীয় সাফল্যের দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে বিশ্লেষণটি। যাতে উছমানীয় শৌর্যবীর্য পুনরায় ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে তুলে আনা হয়েছে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট।

মুসলিম দেশগুলোয় অস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারী হওয়া

দিনপরিক্রমায় তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রতি মুসলিম দেশগুলো ঝুঁকে পড়ায় মার্কিন অস্ত্র আমদানি থেকে তারা ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। বৈশ্বিক ভূ-প্রতিরক্ষা খাত তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের অন্যতম রপ্তানিখাতে পরিণত হয়েছে। সেইসাথে তুর্কি সামরিক বিমান, বিভিন্ন অস্ত্র গোলাবারুদও আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আজারবাইজান, মালদ্বীপ এমনকি সৌদি আরব পর্যন্ত নিজস্ব অস্ত্র সরবরাহে আঙ্কারার উপর বৃহৎ পরিসরে নির্ভরশীল হওয়া বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি বাজারে তুরস্কের ক্রমাগত প্রভাবশালী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত বহন করে।

বায়রাক্তার টিবিটু ড্রোনের অভাবনীয় সফলতা

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বেই প্রায় ১৪টি দেশ তুরস্কের বায়রাক্তার টিবি-টু ড্রোন ব্যবহার করেছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুদ্ধের বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপে টিবি-টু ড্রোনকে সারফেস টু এয়ার মিসাইলের মতো অস্ত্র ধ্বংস করতে দেখা গেছে। সেইসাথে অন্যান্য বিমান ও আর্টিলারি হামলার লক্ষ্য নির্ধারনেও সহায়তা করতে দেখা গেছে তুর্কি এই ড্রোনকে। ফলে বর্তমানে বৃহৎ পরিসরে এই ড্রোনের চাহিদা প্রচুর।

তুর্কি ড্রোনের উপর বাড়ছে মুসলিম দেশগুলোর আগ্রহ

  • ইন্দেনোশিয়া

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া নিজ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তুরস্ক থেকে ৪৫টি ‘আতমাজা’এন্টিশিপ গাইডেড মিসাইল এবং বারোটি আনকা ড্রোন ক্রয়ের পর তুরস্কে বায়রাক্তার টিবি-টু ড্রোনের ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি।

  • মালদ্বীপ

মুসলিম দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপও তুরস্ক থেকে নতুন কেনা ৩টি টিবি-টু ড্রোনকে তাদের বিমান বাহিনীতে সংযুক্ত করেছে। যা মালদ্বীপের জলসীমায় নজরদারী কার্যক্রম আরো ভালভাবে পরিচালনা করতে ব্যবহার করা হবে।

  • সৌদি আরব

ইউরোপিয়ান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ও কুয়েতের পর তুর্কি ড্রোনের তৃতীয় ভোক্তা সৌদি আরব। সৌদি বিমান ও নৌবাহিনীর ড্রোন সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২৩ সালে তুরস্ক সৌদির মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যে চুক্তির অধীনে সৌদি আরব তুরস্কের আকিনজি ড্রোন ক্রয়ে সক্ষম হয়।

  • পাকিস্তান

তুরস্কের তৈরি অস্ত্রের অন্যতম ক্রেতা পাকিস্তান। তুরস্কের সাথে হওয়া এক প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৬ থেকে ৭টি আকিনজি ড্রোন পাকিস্তান অর্জন করার পর ২০২৩ সালের এপ্রিলে সেগুলিকে সক্রিয় করেছে। এবং চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে উচ্চতর ইঞ্জিন সজ্জিত আকিনজি-বি ড্রোন আশা করা হচ্ছে।

সমরাস্ত্র রপ্তানিতে বিশ্বে ১১তম তুরস্ক

প্রতিরক্ষা ও সমরাস্ত্র বিষয়ক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত জরিপে বিশ্বের ৬৬ দেশের মধ্যে তুরস্কের অবস্থান ১১তম। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের সময়কার তুলনায় ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে ১০৬ শতাংশ।

ইউরোপের প্রতিরক্ষা কাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় তুরস্ক

দ্য ইউরোপিয়ান টাইমসের প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, তুরস্ক বিভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চল মিলিয়ে মোট ১৮৫ দেশে ২৩০ ধরনের পণ্য রপ্তানি করে। ইউরোপের সামরিক গোলাবারুদের চাহিদা তুরস্কই পূরণ করে। সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জের ধরে যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ রপ্তানি খাত ও সমরাস্ত্র রপ্তানি খাতে তুরস্কের বর্তমান এই উচ্চ অবস্থান ইউরোপের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কাঠামোতে তুরস্ককে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। ফলত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিমণ্ডলে তুরস্কের বিদ্যমান এই অবস্থান দেখে মনেই হতে পারে, তুরস্ক ধীরে ধীরে তাদের হারানো উসমানীয় শৌর্যবীর্য পুনরুদ্ধারে এগিয়ে যাচ্ছে। 

সূত্র: দ্য ইউরোপিয়ান টাইমসের বরাতে আলজাজিরা (তুরস্ক)           

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত