ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশজুড়ে মাদরাসাগুলোর অর্থের উৎস এবং শিক্ষাব্যবস্থা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগের পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে, ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর) অভিযোগ করেছিল , মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষায় সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে এবং যুগোপযোগী বিষয়গুলোর শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না।
এনসিপিসিআর জানায়, মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং ভারতীয় শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায়ও পড়ছে না। এই অভিযোগের ভিত্তিতে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২২ মার্চের একটি রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়। ওই রায়ে `উত্তরপ্রদেশ বোর্ড অফ মাদরাসা শিক্ষা আইন ২০০৪’ কে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল।
এনসিপিসিআর তাদের মতামতে আরও জানায়, মাদরাসাগুলো ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে লঙ্ঘন করছে। যা সংবিধানের ১৪তম অনুচ্ছেদে সুরক্ষিত একটি মৌলিক অধিকার। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী ও সুভাষ বিদ্যার্থীর বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশ সরকারকে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অন্যান্য স্বীকৃত প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয় এবং ইন্টারমিডিয়েট স্কুলগুলোতে ভর্তি করানোর নির্দেশ দেয়।
তবে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। উত্তরপ্রদেশ সরকার আদালতে জানায় যে, মাদরাসাগুলোতে দেওয়া ধর্মীয় শিক্ষা সংবিধানসম্মত এবং সরকার নিজেই এ ধরনের শিক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। এই পটভূমিতে মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা এবং ধর্মীয় শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ভারতে ২৪,০১০টি মাদরাসা ছিল। যার মধ্যে ১৯,১৩২টি স্বীকৃত এবং ৪,৮৭৮টি অস্বীকৃত। উত্তরপ্রদেশে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মাদরাসা অবস্থিত। এছাড়া, রাজস্থানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদরাসা রয়েছে। মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীরা মৌলভি (দশম শ্রেণির সমতুল্য), আলিম (দ্বাদশ শ্রেণির সমতুল্য), কামিল (স্নাতক ডিগ্রি), এবং ফাজিল (মাস্টার্স ডিগ্রি) কোর্সে শিক্ষা গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, ভারতে দুটি ধরণের মাদরাসা রয়েছে, মাদরাসা দারসে নিজামি এবং মাদরাসা দারসে আলিয়া। প্রথমটি দাতব্য সংস্থা হিসেবে পরিচালিত হয় এবং রাজ্যের স্কুলশিক্ষা পাঠ্যক্রম অনুসরণ করতে বাধ্য নয়। দ্বিতীয়টি রাজ্যের মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত, যা রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।
মাদরাসাগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা ও তাদের অর্থায়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের চলমান তদন্ত এবং এনসিপিসিআরের মতামত ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার মেলবন্ধন কতটা সম্ভব হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস