নিউজনেস্ট

গাজা যুদ্ধ যেভাবে ইসরায়েলের ধ্বংসকে তরান্বিত করছে

ছবি : কুদস মিডিয়া

ইতিহাসের ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সবচে দীর্ঘতম যুদ্ধ চলছে গাজায়। চলমান যুদ্ধের প্রায় এক বছরে ইসরায়েলের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আবহে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে এই যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব। এ প্রসঙ্গে খোদ ইসরায়েলের সাবেক বিচারমন্ত্রী হাইম রামোন বলেছেন, ইসরায়েল বিজয় থেকে একধাপ দূরে নয়, ইসরায়েল মূলত এখন কৌশলগত পরাজয় থেকে একধাপ দূরে রয়েছে।

ইসরায়েলিদের রক্ষায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এতদিন ইহুদী ধর্মের ‘পবিত্র গরুর’ ভূমিকায় থাকলেও চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব চেইনে একের পর এক পদত্যাগ ইসরায়েলি জনতার গর্ব ‘পবিত্র গরুর’ গায়ে অপবিত্রের তকমা লাগিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে সামরিক ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করলে এপর্যন্ত যুদ্ধে সেনাবাহিনীর ১২টি ব্যাটালিয়ন, সাতশোরও বেশি নিহত সেনা, ১০হাজার আহত সেনা এবং সীমান্তে সেনা নেতৃত্বের প্রতি ইসরায়েলি জনতার ৫৫ শতাংশ আস্থা হারিয়েছে ইসরায়েল।

অন্যদিকে ইসরায়েলের সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির প্রতি নজর বুলালে দেখা যায়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েলে ধর্ম পালনকারী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মধ্যে বেড়েছে বিরোধ। বিশেষ করে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় থেকে চলে আসা এই বিরোধ, যুদ্ধ শুরুর পর বেড়ে যায় ডানপন্থী ধর্মপালনকারী ইসরায়েলিদের মধ্যে ২ লক্ষ অস্ত্র বিতরণের জের ধরে। কারণ হিসেবে ইসরায়েলি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদিরা বলছেন, এইসব অস্ত্র সরবরাহ ডানপন্থী ধর্মঅনুসারীদের সাথে দ্বন্দ বাড়াবে।

এছাড়া সাধারণ ইসরায়েলিদের মধ্যে গণপলায়নের মতো বেড়েছে দেশ ত্যাগের হিড়িক।  শুধুমাত্র যুদ্ধ শুরুর মাস অক্টোবরেই দখলকৃত ভূমি ছেড়ে পালিয়েছে ১২ হাজার ৩০০জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী । যা ২০২২ সালের অক্টোবরে পলায়নকারীদের থেকে ৪০০ গুণ বেশি। চলতি বছরে এ সংখ্যাটা না কমে  বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। গেল মার্চেও নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে ৪২ হাজার ১৮৫ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী। গত জুলাইয়ের হিসেবে যারা এখনো ফিরে আসেনি। দক্ষিণ এবং উত্তর ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে বেড়েছে অসন্তোস। ফলশ্রুতিতে ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভে নিরাপত্তা চেয়ে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ‘হায়! আমি যদি তেল আবিব হতাম’ স্লোগানও দিতে দেখা গেছে।

শুধু সামরিক,সামাজিক ক্ষয়ক্ষতিই নয়, ইসরায়েলের অর্থনীতিও এই যুদ্ধের কারণে সম্মুখীন হয়েছে বিরূপ পরিস্থিতির। গবেষণা সংস্থা জায়তুনা সেন্টার ফর স্টাডিস বিভাগের তথ্য অনুসারে, চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের ভোক্তা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ শতাংশ। দারিদ্রের হার বেড়েছে চলতি বছরে ২৫.৩ শতাংশ। ৮৫.১শতাংশ অবৈধ বসতি স্থাপনকারী দিনাতিপাত করছে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে । যার মধ্যে আবার ৮১.৮ শতাংশ অবৈধ বসতি স্থাপনকারীর কাঁধে রয়েছে পূর্ব ঋণের বোঝা। বন্ধ হয়ে গেছে হাজারের উপর কোম্পানি এবং প্রকল্প। এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের একটি আধা-সরকারি সংস্থার তথ্য উল্লেখযোগ্য।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলে বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে ৪০ শতাংশ। বন্ধ হয়ে গেছে ৭ লাখ ২৬ হাজার স্টার্টআপ এবং ছোট ইসরায়েলি কোম্পানি। তাই গাজা যুদ্ধ এখন ইসরায়েলের এমন এক গ্রাসে পরিণত হয়েছে, যা না গিলে ফেলা যায় না উগড়ে দেয়া যায়।  

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত