আজ ২৫শে সেপ্টেম্বর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ৯৪৩তম দিনে প্রবেশ করেছে। পূর্ব ইউরোপের এই যুদ্ধের বয়স প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেলেও যুদ্ধ বন্ধের কোন ইঙ্গিত এখনও মিলছে না। কারণ, যুদ্ধের সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা যুদ্ধ বিরতি বা শান্তি স্থাপনের কোন ইঙ্গিত বহন করে না।
যুদ্ধ পরিস্থিতি
সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের উদ্যোগ ঘোষণা দেওয়ার মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেনে তার হামলার পরিধি বৃদ্ধি করেছে। সাম্প্রতিক রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রুশ সীমান্তের নিকটবর্তী দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের একটি বহুতল ভবনে বোমা হামলা করা হয়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয় ৩৪জন। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝিয়া -যা সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে- রুশ হামলায় সাতজন আহত হন।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় জাপোরিঝিয়ার গভর্নর ইভান ফেডোরভ অভিযোগ করেন, রাশিয়া সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করছে। তিনি বলেন, একটি রুশ ড্রোনের হামলায় একটি গ্রামে একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
একই সময়ে, দনেস্ক অঞ্চলের পোকরভস্ক শহরে রাশিয়ার আর্টিলারি হামলায় অন্তত দু’জনের প্রাণহানি ঘটে। অন্যদিকে দনেস্কের গভর্নর ভাদিম ফিলাশকিনের ভাষ্যমতে, রাশিয়া কস্তিয়ান্তিনিভকা শহরের দুটি অবকাঠামো স্থাপনায় বোমা হামলা চালালে একজন নিহত এবং দুইজন আহত হন।
এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ভুখলেদারে আক্রমণ শুরু করেছে। এই শহরে যুদ্ধের আগে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করত। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, রুশ বাহিনী শহরটির আশপাশে আটটি আক্রমণ পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে চারটি প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি
এদিকে চলমান যুদ্ধে একদিকে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে সহায়তা করলেও রাশিয়াকে তারা একঘরে করতে পারেনি। যার প্রমাণ চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের কিছু ঘটনা প্রবাহ।
সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুধুমাত্র আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যাবে না। তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় মস্কোকে বাধ্য করার আহ্বান জানান। এসময় জেলেনস্কি মস্কোকে যুদ্ধের ‘একমাত্র আক্রমণকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করেন এবং রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য উত্তর কোরিয়া এবং ইরানকে দোষারোপ করেন।
অপরদিকে জাতিসংঘের বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা হয়। ব্লিঙ্কেন অভিযোগ করেন, চীন কর্তৃক রাশিয়াকে প্রযুক্তি সরবরাহ রাশিয়াকে যুদ্ধে পুনর্গঠিত হতে সাহায্য করছে। কিন্তু চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের ওপর দায় চাপানো অযৌক্তিক।’
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সঙ্ঘাতেকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। তবে জেলেনস্কি ইতোমধ্যে সেই পরিকল্পনাকেও ‘বিধ্বংসী’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ যে এখনই থামছে না তার আরেকটি বড় প্রমাণ হচ্ছে উভয় দেশই আগত অর্থ বছরের বাজেটে প্রতিরক্ষার পিছনে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী সেরগেই মার্চেনকো জানিয়েছেন, ইউক্রেন ২০২৫ সালে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা’ খাতে প্রায় ৫৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। যা দেশটির মোট জিডিপির ২৬ শতাংশ এবং সরকারের মোট বাজেটের ৬১ শতাংশ।
অপরদিকে রাশিয়াও ২০২৫ সালে সামরিক খাতে ৯ শতাংশ বাজেট বৃদ্ধি করে ৪৪৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী আন্তোন সিলুয়ানভ জানান, এবারের অর্থ বছরে সামরিক চাহিদা মেটানোর দিকেই তাদের প্রধান মনোযোগ থাকবে।
অস্ত্র সরবরাহ ও প্রযুক্তি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ভ্লাদিস্লাভ ভ্লাসিউক বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যবহার করা অস্ত্রের প্রায় ৬০ শতাংশ যন্ত্রাংশ চীন থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। চীন আসলে সরাসরি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। একই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহকৃত কিছু যন্ত্রাংশও রাশিয়ায় পৌঁছেছে। যা নজরদারি, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা উন্নতকরণে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সংঘাত ক্রমাগত উত্তপ্ত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যুদ্ধের কোনো সমাধান এখনও দৃশ্যমান নয়।
সূত্র: আলজাজিরা