নিউজনেস্ট

পাঁচ বছর শিক্ষাবঞ্চিত থাকবে গাজার শিশুরা

যুদ্ধের কারণে পাঁচ বছর শিক্ষা পাবে না ফিলিস্তিনি শিশুরা
ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিজ বিদ্যালয়ে বিষন্ন মনে বসে আছে একটি শিশু। গাজার নুসাইরাত থেকে তোলা একটি ছবি। ছবিঃ উনুরওয়া

সম্প্রতি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতিসংঘের শরণার্থী, ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এর পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনে কর্মরত দলের যৌথ গবেষণা ফলাফল বলছে, গাজায় অক্টোবর-২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে শিশু এবং শিক্ষার্থীরা পাঁচ বছরের মতো শিক্ষা হারাতে পারে। যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়বে শিশুদের ওপর।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সাল থেকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান, কোভিড-১৯ মহামারী এবং বর্তমান যুদ্ধের ফলে গাজা অঞ্চলের শিশুরা ইতোমধ্যেই ১৪ মাসের শিক্ষা হারিয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধ দীর্ঘ হওয়াতে এই শিক্ষাবিহীন থাকার সময়সীমা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। যা শিক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যতে সৃষ্টি করবে গুরুতর সংকট।

গবেষকরা জানান, যদি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় তাহলেও শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে প্রায় দুই বছরের শিক্ষা পাবে না। কিন্তু যদি এই যুদ্ধ ২০২৬ সাল পর্যন্ত চলে, তাহলে এই শিক্ষাবঞ্চিত থাকা পাঁচ বছর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, মানসিক আঘাত, দুর্ভিক্ষ এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মতো অতিরিক্ত সমস্যাগুলো শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের সংকটকে আরও গভীর করে তুলবে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অন্যান্য মানবিক প্রয়োজনীয়তার প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা হলেও গাজার শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব কমে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে। গাজায় শিক্ষাকে সরাসরি জীবন রক্ষাকারী হিসেবে বিবেচনা করছে না আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো। অথচ শিক্ষার অভাব দীর্ঘমেয়াদে গাজার জন্য মারাত্মক একটি সংকট তৈরি করতে পারে।

এদিকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের কারণে ১০,৬০০ এর বেশি শিশু এবং ৪০০ শিক্ষক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১৫,৩০০ শিক্ষার্থী ও ২,৪০০ শিক্ষক। একই সঙ্গে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করছে হাজার হাজার যুবক।

এছাড়াও বৈশ্বিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সংগৃহীত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার ৯০ ভাগেরও বেশি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলো আবার পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব নয়।

যদিও গত আগস্ট থেকে ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় প্রায় ৮,০০০ শিশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এটি অত্যন্ত সীমিত।

বাড়ছে শিক্ষা দৈন্যতার হার

গবেষণা মতে, ইতোমধ্যে ১৪ মাস শিক্ষা হারানোর ফলে গাজার শিশুরা মুখোমুখি হচ্ছে শিক্ষা দৈন্যতার। দশ বছর বয়সেও মৌলিক পাঠ পড়তে অক্ষম শিশুদের হার অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপসংহার

গাজার বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি শুধুমাত্র জীবন এবং অবকাঠামোর ক্ষতিই করছে না। বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই শিক্ষার সংকট তীব্রতর হচ্ছে। তাই এর সমাধানে দ্রুত  কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যাতে গাজার শিশুদের জন্য শিক্ষার আলো পুনরায় ফিরে আসে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত