বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নানান উদ্যোগ নিয়েছে তালেবান সরকার। বিশেষ করে পানি ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্প্রতি দেশটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর সাম্প্রতিক অন্যতম উদাহরণ জাবুল প্রদেশের তুরি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প— যে প্রকল্প দেশের কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের পানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল লতিফ মনসুর জাবুল প্রদেশে ‘তুরি’ বাঁধের উদ্বোধন করেন। এই বাঁধটি সম্পূর্ণভাবে ইসলামিক আমিরাতের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে। বাঁধটির পানি ধারণক্ষমতা ২.৯ মিলিয়ন ঘনমিটার, এর উচ্চতা ২৪ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ৪০ মিটার। এটি প্রায় ২.৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। তুরি বাঁধ ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান এবং প্রায় ৫,০০০ পরিবারকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবে বলে আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, বাঁধটি ১০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনেও সক্ষম—যা দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর না করে এ প্রকল্পগুলো পুরোপুরি তালেবান সরকারের অর্থায়নেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। শাসনক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তালেবান সরকার দেশের নানান প্রকৃতিক সম্পদ অর্থনৈতিক স্বাবলম্ভিতা অর্জন এবং জনকল্যাণে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে আসছে।
আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদে ঔপনিবেশিক প্রভাব
আফগানিস্তান প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ হলেও— ব্রিটিশ, সোভিয়েত এবং মার্কিন দখলদারিত্বের কারণে এসব সম্পদ সঠিকভাবে জনকল্যাণে কখনোই ব্যবহৃত হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কৌশলগত অব্যবস্থাপনার কারণে এসব সম্পদ দেশটির উন্নতির জন্য ব্যবহৃত না হয়ে বিদেশি উপনিবেশবাদী শক্তির দখলে চলে যায় বারবার। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আফগানিস্তানের নদীর পানি প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রবাহিত হয়ে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সবসময়। ফলে, আফগানরা সুবিধাভোগী সেই দেশের কাছ থেকেই নিজেদের নদীর পানি থেকে উৎপদিত বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হয়েছে।
তালেবান সরকারের নানা উদ্যোগ
২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। পানিসম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা, খনিজ শিল্পের উন্নয়ন, কৃষি এবং বনজ সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের মতো বিভিন্ন খাতে ইসলামিক আমিরাত ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের সম্পদকে লুটপাট থেকে রক্ষা করে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও পানি প্রকল্পের অগ্রগতি
ইসলামিক আমিরাতের অধীনে আফগানিস্তান দ্রুততার সঙ্গে পানি সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল কাবির বলেছেন, ‘আফগানিস্তান বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বনির্ভর হলেও ভুল নীতি ও বিদেশি হস্তক্ষেপের কারণে এ খাতে উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে বারবার। তবে এখন দেশের বিভিন্ন প্রদেশে নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন, নিমরোজ প্রদেশে কামাল খান বাঁধ এবং জাবুলে তুরি বাঁধের মতো বড় প্রকল্পগুলো প্রমাণ করে তালেবান সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একইসঙ্গে কুনার নদীতে নতুন বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এর বিরোধিতা করছে। তালেবান সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের অধিকারকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তারা বিশ্বাস করে, দেশের সম্পদ দেশের মানুষের জন্যই ব্যবহার হওয়া উচিত।’
আগামীর সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, পানিসম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক বিপ্লব ঘটাতে পারবে তালেবান সরকার। দেশের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোতেও বিদ্যুৎ রপ্তানির ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
সূত্র: হুররিয়াত রেডিও