নিউজনেস্ট

একটি কাফন ও তার বাসিন্দাদের বৃত্তান্ত

একটি কাফন ও তার বাসিন্দাদের বৃত্তান্ত
গাজার শিশুদের শরীরে খোদাই করে লেখা তাদের নাম। ছবি: আল জাজিরা

গাজা উপত্যকায় জমা হয়েছে শোকের অজস্র গল্প। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে চলছে গণহত্যা। আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই গণহত্যার শিকার হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে রয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার শিশু, ১২ হাজারেরও বেশি নারী, এবং প্রায় ২৫০০ বয়স্ক মানুষ।

মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি যেকোন মুহূর্তে একটি বৃহৎ আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে এবং সেই যুদ্ধের আগুন সবকিছু পুড়িয়ে দিতে পারে। প্রতিদিন সংঘাতের বিশ্লেষণ, সামরিক শক্তির জটিল সমীকরণ, শত শত আন্তর্জাতিক সংবাদ আসছে নিউজ চ্যানেলে। আর এসব সংবাদের ভিড়ে আড়াল হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত গাজার ছোট ছোট দুঃখগাঁথা। অথচ এসব গল্পগুলোই প্রকাশ করে যুদ্ধের আসল ভয়াবহ চেহারা। নাড়া দেয় বিশ্ববাসীর হৃদয়কে। হতে পারে গল্পগুলো ছোট। কিন্তু এসব ছোট্ট গল্পেই লুকিয়ে আছে জীবনের কিছু নিষ্ঠুর রূপ।

পৃথিবীর সকল বাবা-মা খেলা করে তাদের শিশুদের সাথে। দু’হাতে উপরে তুলে ভাসিয়ে দেয় শূণ্যে। আদরে আলতো চিমটি কাটে। খেলা মিশে যায় সুখের হাসিতে। কিন্তু গাজায়, সন্তান জন্মের পরই বাবাদের সেই হাসির পরিবর্তে হাতে নিতে হয় কলম। যে কলমের খোঁচায় নিজ সন্তানের শরীরে বাধ্য হয়ে খোদাই করে লিখে রাখতে হয় নিজেদের নাম! যেন তাদের পরিচয় মৃত্যুর পর মুছে না যায়।

গাজাবাসীকে এখন প্রতিদিন তাদের সদ্য ভূমিষ্ট স্নেহের সন্তানদের ছোট্ট দেহের উপর লিখে রাখতে হয় তাদের নাম। কারণ, এই নামগুলোই তাদের শেষ চিহ্ন। যাতে আকাশ থেকে নেমে আসা আমেরিকা তৈরি হাজার টন ওজনের বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন প্রিয় সন্তানের শরীরের টুকরোগুলো উদ্ধারকারীরা খুঁজে পেলে সেই খোদাইকৃত নামগুলো দেখে দেহের টুকরোগুলো একত্রিত করা যায়! হয়তো এক কফিনে, নয়তো অন্য কোন নামহীন দেহের টুকরোগুলোর সাথে!

এ তো গাজার অল্প একটু দুঃখগাথা মাত্র। তবে গাজায় রয়েছে এমন বহু গণকবর, যেখানে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে অনেক অনেক দেহাবশেষ।

শাহাদাত হুসাইন
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত