গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় বিশ্বের শীর্ষ টেক কোম্পানির সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবার। সেই সাথে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং আধুনিক প্রযুক্তি যেভাবে কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়েছে- সম্প্রতি তা নিয়ে বিতর্ক বেড়েই চলছে।
প্রযুক্তি ও যুদ্ধের যোগসূত্র
গাজায় চলমান যুদ্ধের সময়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তি সামরিক কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সোফিয়া গুডফ্রেন্ড বলেন, ‘গাজা যুদ্ধ ইউক্রেন যুদ্ধের মতোই, ভবিষ্যত যুদ্ধের অস্ত্রের পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে।’ যুদ্ধের ময়দানে সরাসরি এসব প্রযুক্তির ব্যবহার আধুনিক সামরিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজা যুদ্ধ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচালিত হওয়া দুনিয়ার বড় ধরনের সংঘর্ষগুলোর একটি হিসেবে এমন চিত্র সামনে এনেছে, যা বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে আমাজন, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীরকে এসব প্রযুক্তি সরবরাহের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
প্রযুক্তি কোম্পানির অভ্যন্তরে বিরোধী মতামত
গাজায় প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ধ্বংসের পরিপ্রেক্ষিতে, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে থেকে ইসরায়েল বিরোধী কণ্ঠস্বর উঠে আসছে। ডেইলি সাবাহ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাজনের অনেক কর্মী ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন। বেশ কিছু কর্মী জানান, কোম্পানির প্রযুক্তি সামরিক কাজে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গুগল এবং মাইক্রোসফটের কর্মীরাও কোম্পানির সামরিক প্রকল্পগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এসব প্রকল্প বন্ধের জন্য কোম্পানির অভ্যন্তরে প্রতিবাদ শুরু করেছেন।
নিম্বাস প্রকল্প: সংঘর্ষের জন্য যে টেক প্রকল্প দায়ী
২০২১ সালে গুগল ও আমাজনের যৌথ প্রচেষ্টায় নিম্বাস নামের একটি প্রকল্প ঘোষিত হয়। যে প্রকল্পের অধীনে ইসরায়েলের সরকারকে ১.২ বিলিয়ন ডলারের ক্লাউড সেবা বরাদ্দ করা হয়। এই প্রকল্পে মূলত ইসরায়েলের সরকারের সুরক্ষা ও নজরদারি কার্যক্রমে প্রযুক্তি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রকল্প নিয়ে দুই কোম্পানির কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। তারা মনে করেন, এই প্রযুক্তি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ফিলিস্তিনিদের উপর নজরদারি চালানো এবং অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে সহায়তা করতে পারে।
ডেইলি সাবাহ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে নিরপেক্ষ কিনা সে বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
মানবাধিকার ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক ডেবোরা ব্রাউন বলেন, ‘এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে মানবাধিকার নিরীক্ষন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যাতে তারা কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়ক না হয়।’ তিনি আরও বলেন, সামরিক বাহিনীর সাথে প্রযুক্তি কোম্পানির এই ধরনের চুক্তি পরবর্তীতে কোম্পানিগুলোর নৈতিক নীতিমালার বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে।
ফিলিস্তিনের সমর্থনমূলক বিষয়বস্তুর উপর সেন্সরশিপ
তদুপরি ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমেও ফিলিস্তিন সমর্থনমূলক বিষয়বস্তুর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অভিযোগ উঠেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন সমর্থনকারী বিষয়বস্তু নিয়ে বিশ্বব্যাপী সেন্সরশিপ চলছে। মেটার (ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম) কর্মীরাও কোম্পানির নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাতে চাইলেও বাধার সম্মুখীন হন।
অন্যদিকে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর পণ্যের সামরিক ব্যবহার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পক্ষপাতমূলক সেবা নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে এই ধরনের বিতর্ক ভবিষ্যতে আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: তুর্কি সংবাদমাধ্যম