সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিখ্যাত পত্রিকা দ্য টাইমসের একটি নিবন্ধে প্রকাশে এসেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা গোপন সম্পর্কের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

কৌশলগত সহযোগিতা

ব্রিটিশ লেখক ক্যাথরিন ফিলিপ তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর হামলার পরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান এই সুইস চ্যানেল ব্যবহার করে একটি চুক্তি সম্পাদন করে। চুক্তিটির অধীনে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীকে ইরানের পক্ষ থেকে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যেই সহযোগিতা উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায় সূচনা করে।

আরও পড়ুন: যুদ্ধের কাদায় ক্রমশ ডুবছে ইসরায়েল: ইসয়ারায়েলি পত্রিকা মারিভ

সম্পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

এরপর ২০০৩ সালে ইরান আবারও এই সুইস চ্যানেলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা শুরু করে। আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল একটি বিস্তৃত চুক্তি সম্পাদন করা। যার মধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এই প্রস্তাবের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং সুইস রাষ্ট্রদূতের ওপর ইরানের বার্তাগুলি অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করার অভিযোগ আনেন।

সরাসরি যোগাযোগের সূচনা                                         

২০১৩ সালে আলোচনাগুলো আরও প্রকাশ্যে আসে। সেই সময় মার্কিন  প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রধান পারমাণবিক আলোচক ওয়েন্ডি শেরম্যান ইরানি কূটনীতিকদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল  ইরানের পরমাণু কর্মসূচি। এই বৈঠক বহুদিন ইরানের বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমঝোতার আশাবাদ তৈরি করেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কূটনৈতিক আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এবং সুইস চ্যানেলটি পুনরায় সক্রিয় হয়।

উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা

২০১৯ সালে কাসেম সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সে সময় ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে একটি সরাসরি বার্তা পাঠায়। যাতে বলা হয়, ‘উত্তেজনা এড়িয়ে চলুন।’ এরপর ইরান অবশ্য মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে একটি প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়। তবে তারা জানত, আক্রমণটিতে কোনো প্রাণহানি ঘটাবে না; বরং এটি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে প্রমাণিত হবে।

সাম্প্রতিক বার্তা

নিবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়েছে সর্বশেষ ইরান-যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগটি ঘটে যখন ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনার কথা জানায়। ইরান জানায় তারা হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইরানের বিপ্লবী গার্ডের নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চায়।

দ্য টাইমসের এই নিবন্ধের উপসংহারে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোপন যোগাযোগের মাধ্যম সুইস চ্যানেল সম্পর্কে বলা হয়, এই কূটনৈতিক চ্যানেল উভয় দেশকে একাধিকবার সংঘাত থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করেছে। এবং এই চ্যানেলটির কার্যকারিতা সংকটের সময়ে নতুন করে প্রতীয়মান হয়েছে। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন বা অবনতি যাই হোক না কেন, এই চ্যানেলটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দুই দেশের গোপন সমঝোতার সেতু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকবে।

সর্বশেষ আপডেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *