নিউজনেস্ট

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর কোন বই বেশি পড়ছে মার্কিন পাঠক সমাজ?

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর কোন বই বেশি পড়ছে মার্কিন পাঠক সমাজ?
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর কোন বই বেশি পড়ছে মার্কিন পাঠক সমাজ? ছবি: আল জাজিরা

গাজায় ইসরায়েলের নির্মম আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস এবং অ্যামাজনের বেস্ট সেলিং বইয়ের তালিকার সবচেয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুটি বই। যা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে থাকা গভীর মতপার্থক্যকে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি পাঠকদের মাথায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে বিভিন্ন চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

ফিলিস্তিনে যুদ্ধের শত বছর

বেস্ট সেলিং বইয়ের প্রথমটি হলো, ‘ফিলিস্তিনে যুদ্ধের শত বছর’। বইটি লিখেছেন ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভূত আমেরিকান ইতিহাসবিদ রশিদ খালিদি। এ বই প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। এতে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন এবং উপনিবেশ সম্পর্কে ১৯১৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দীর্ঘ এক শতাব্দীর ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। লেখক খালিদি বইটিতে দেখিয়েছেন কীভাবে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের প্রকল্প পশ্চিমা শক্তির সমর্থন পেয়েছে এবং আমেরিকা কীভাবে গত ৭৫ বছর ধরে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে আসছে।

আরও পড়ুন: ইসরায়েলের যে দখলদারিত্বের কথা বিশ্বের অজানা

ইসরায়েল: ভুল বোঝাবুঝির অন্তরালে একটি দেশ

বেস্ট সেলিং বইটির দ্বিতীয়টি হলো, ‘ইসরায়েল: ভুল বোঝাবুঝির অন্তরালে একটি দেশ’। বইটি লিখেছেন ইসরায়েলি-আমেরিকান অভিনেত্রী এবং ইসরায়েলের সাবেক দূত নোয়া তিশবি। ২০২১ সালে প্রকাশিত এই বইয়ে তিশবি ইসরায়েল সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী ভুল ধারণা এবং ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়া বইটিতে তিশবি কেন বিশ্বের অনেকে ইসরায়েলকে ঘৃণা করে এবং কীভাবে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের ভাবমূর্তি উন্নত করা যেতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন।

বিরোধপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি

যদিও রশিদ খালিদি এবং নোয়া তিশবি উভয়েই তাদের বইগুলো ‘তুফানুল আকসা’ সংঘাতের আগে লিখেছেন এবং তারা ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতের পরস্পরবিরোধী কারণ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই বইগুলো আমেরিকান পাঠকদের মধ্যে নতুন দ্বিধা তৈরি করেছে এবং সংঘাত নিয়ে নতুন মাত্রার মতপার্থক্যের জন্ম দিয়েছে।

দুই বইয়ের মাঝে পার্থক্য

রশিদ খালিদি তার বইতে গবেষণালব্ধ প্রমাণ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ইসরায়েলি ও পশ্চিমা প্রচারের অসত্যতা তুলে ধরেছেন। তিনি ফিলিস্তিনি ভূমির আসল মালিকদের মালিকানা বাতিল এবং তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মুছে ফেলার অপচেষ্টার বিশদ বিবরণ পেশ করেছেন। অন্যদিকে নোয়া তিশবি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রচলিত কিছু মিথ্যা এবং ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং ইসরায়েলের অবস্থানকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

উভয় লেখকের অভিমত

ইতিহাসবিদ রশিদ খালিদি বইটিতে উল্লেখ করেন, বহির্বিশ্বে ইসরায়েলের নীতি বাস্তবায়নে ইসরায়েলের প্রচলিত বয়ান তথা ‘ফিলিস্তিন তাদের প্রতিশ্রুত ভূমি’ ও ‘তাদের সংগ্রাম মূলত আত্মক্ষার(?) জন্য’ এসব বাইরের দুনিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসরায়েলের খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়।

খালিদি মনে করেন, ফিলিস্তিনিরা ঐতিহাসিকভাবে আমেরিকান জনমত হারিয়েছে মূলত এই কারণে যে, ইয়াসির আরাফাত এবং পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) আমেরিকান জনমতের গুরুত্ব এবং এর ফলাফল পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেননি। ফলে ইয়াসির আরাফাত সেই জনমতকে তাদের পক্ষে সংগঠিত করতে ব্যর্থ হন।

অন্যদিকে নোয়া তিশবির বইয়ের মূল লক্ষ্য ছিলো ইসরায়েলের পণ্য বয়কট, বিনিয়োগ বন্ধ এবং দেশটির উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার জন্য বিশ্বজুড়ে চলমান বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট এ্যান্ড স্যাংশন বা বিডিএস এর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রেফারেন্স সরবরাহ করা এবং অধিকাংশ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রমবর্ধমান ইহুদি-বিরোধী এবং জায়োনবাদ-বিরোধী মতামতের প্রসারের মোকাবেলা করা।

তিশবি স্বীকার করেন, ইসরায়েল নিখুঁত দেশ নয়। তবে তিনি মনে করেন, এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তার কথা, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক বেশি অযথা(?) সমালোচনার শিকার হয়!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত