সম্প্রতি বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন ‘টাইম’ তাদের নতুন সংখ্যার প্রচ্ছদে শহীদ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মুখের উপর একটি লাল ‘ক্রস চিহ্ন ব্যবহার করে জন্ম দিয়েছে সমালোচনার। ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ইসরায়েলের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আখ্যা দিয়ে এমন সমালোচিত কাজ করেছে টাইম ম্যাগাজিন।
টাইমের প্রচ্ছদ ও প্রতিক্রিয়া
এ ব্যাপারে টাইম ম্যাগাজিন তাদের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রামে বলেছে ‘টাইম ম্যাগাজিন হিটলার, সাদ্দাম হোসেন, ওসামা বিন লাদেন এবং ইরাকের আল কায়েদার নেতা আবু মুসাব জারকাবীর মৃত্যুর সময়ও এই রক্তাক্ত লাল চিহ্ন ব্যবহার করেছিল। এর মাধ্যমে তারা মূলত , ইসরায়েলি বর্ননাকে সমর্থন করে ইয়ায়াহইয়া সিনওয়ারকে সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরেছে।’
কিন্তু এই প্রচ্ছদটি প্রকাশের পরপরই নানা মহল থেকে শুরু হয় সমালোচনা। অনেকেই মনে করছেন, টাইম ম্যাগাজিন অন্ধভাবে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বাহিনীর পক্ষ নিয়েছে এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে সন্ত্রাস হিসেবে উপস্থাপন করছে।
বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
এদিকে টাইম ম্যাগাজিনের এহেন কর্মকান্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে বইছে সমালোচনার বন্যা।
আরবের বিশিষ্ট লেখক খলিফা আল-বাশবাশ নিজের এক্স একাউন্টে টাইমের এই প্রচ্ছদকে ‘ইতিহাস অবমাননা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ ইয়াহইয়া সিনওইয়ারের বিদায়ের পর পশ্চিমাদের মাঝে যে উন্মত্ততা সৃষ্টি হয়েছে, তা সিনওয়ারের মর্যাদা ও প্রভাবের প্রমাণ। তার মৃত্যুতে উচ্ছাস এবং তার প্রতি বিদ্বেষ তাকে আরও উজ্জ্বল ও সম্মানিত করে তুলছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের সুপরিচিত ব্লগার রাওয়ান সিনওয়ার এবং ফিলিস্তিনের প্রতি বিশ্ববাসীর আচরণের নিন্দা করে বলেন, ‘আমি এমন কোনো জাতি দেখিনি যাদের মানবতা এতটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যেমনটি আজ ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে ঘটছে! তোমরা সত্যিই ঘৃণ্য।’
অপরদিকে সাংবাদিক ড্যান কোহেন নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেন, ‘সিনওয়ারের প্রতিরোধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সংগ্রামের দৃশ্য প্রচার করে ইহুদিবাদীরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে, এখন তাদের মদদপুষ্ট গণমাধ্যম সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। তবে দেরিতে হলেও বিশ্ব সত্যিকারের প্রতিরোধ কেমন তা দেখতে পেরেছে।
মালেক নামের অপর এক ব্লগার নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেন, ‘অনেক দিন ধরে আমি টাইমের যে সব অজ্ঞতাপ্রসূত মন্তব্য পড়েছি, তার অন্যতম ছিল টাইম সাময়িকীর প্রচ্ছদে সিনওয়ার সম্পর্কে বর্ণনা।’
এদিকে বিশিষ্ট সোশ্যাল ওয়ার্কার লাইমা এক্সে টাইম ম্যাগাজিনের পক্ষপাতিত্বের সমালোচনা করে লিখেন, ‘ টাইমের এই কাজ অত্যন্ত লজ্জাজনক। এর মাধ্যমে ‘টাইম’ তাদের অন্যায় পক্ষপাতিত্ব এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের অধিকার কেরে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সিনওয়ার তো কেবল একজন মানুষ ছিলেন। আর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।’
এছাড়াও এক্সে জনপ্রিয় বিশিষ্ট ব্লগার প্যাট্রিসিয়া টাইমের কর্মকান্ডকে ব্যঙ্গকরে এক্সে লিখেছে , ‘ টাইম ম্যাগাজিন হয়তো ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিহত শিশু উদ্ধারের মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেনি।’
মোটকথা, টাইম ম্যাগাজিনের এই প্রচ্ছদ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী আলোচনা ও বিতর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের সমালোচনা ফিলিস্তিন সঙ্কটের ব্যাপারে ইসরায়েলের পক্ষে পশ্চিমাদের অবস্থানকে স্পষ্টত প্রত্যাখ্যান করেছে ।
সূত্র: আল জাজিরা