প্রায় এক মাস ধরে উত্তর গাজার এলাকা জাবালিয়ায় মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। সরবশেষ শুধু গতকালই তাদের হামলায় শহিদ হয়েছে ১১৫জন ফিলিস্তিনি। এদিকে সম্প্রতি জাবালিয়ায় একটি ভবনে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিস্ফোরণে এক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত হয় ইসরায়েলের সিভিল গোয়েন্দা ইউনিট-৮৮৮ এর চার সেনা। এছাড়া আহত হয় আরেক সেনা কর্মকর্তা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, সিভিল গোয়েন্দা ইউনিটের নিহত চারজন হলেন, সিভিল ইউনিটের কর্মকর্তা ইয়োহোনাতান জনি কেরেন (২২), সার্জেন্ট নাসিম মেটাল (২০), অবিভ জেলবোয়া (২১) এবং নাউর হেইমভ (২২)। এদিকে নতুন করে উত্তর গাজায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আহত ইসরায়েলের কিবোতি-৫২ ব্রিগেডের এক কোম্পানি কমান্ডার মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সিভিল গোয়েন্দা বাহিনীর ৮৮৮ ইউনিটটি ইসরায়েলি বাহিনীর একটি বিশেষ স্পাই কমান্ডো ইউনিট হিসেবে পরিচিত। যারা মূলত বিভিন্ন ফ্রন্টে চরম প্রতিকূল পরিবেশে অভিযান চালিয়ে থাকে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ইসরায়েলি সেনাদের মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৭৭৬ জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে শুধু স্থলযুদ্ধেই মারা গেছে ৩৬৫ সেনা।
এদিকে প্রায় ২৫ দিন ধরে গাজার উত্তরাংশ, বিশেষ করে জাবালিয়া ও বেইত লাহিয়া অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী সধারণ ফিলিস্তিনিদের উপর দমন-পীড়ন ও জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। নির্বিচারে বোমাবর্ষণ, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং খাদ্য, পানি, ঔষধ ও জ্বালানির প্রবেশে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন চরম সংকটে পড়েছে।
বেইত লাহিয়ায় গণহত্যা ও মানবিক সংকট
এদিকে আজ সকালে ইসরায়েলি বাহিনী বেইত লাহিয়ার আবু নাসর পরিবারের পাঁচতলা একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৯৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। হামলার পর এখনো প্রায় ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এই ভবনে নারী ও শিশুসহ শতাধিক আশ্রয়প্রার্থী ছিল।
অন্যদিকে গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, হাসপাতালের আশেপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণের কারণে আহতদের সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে অনেক আহত ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে।
গাজার ফিল্ড হাসপাতালগুলোর পরিচালক মাওরান আল হামস মানবিক সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, গাজার হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক দল প্রয়োজন।
হামাসের প্রতিক্রিয়া
বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলের আজকের গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বেইত লাহিয়ার গণহত্যা ইসরায়েলি বাহিনীর পরিকল্পিত নিধন ও উচ্ছেদের স্পষ্ট প্রমাণ। এত কিছুর পরও আরব ও আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
উল্লেখ্য, গতকালও দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ১১৫জন ফিলিস্তিনি শহিদ হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু উত্তর গাজাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ১০৯ জন ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ৪৩,০৬১ জন ফিলিস্তিনি শহিদ এবং এক লক্ষ এক হাজার ২২৩ জন আহত হয়েছেন।
তবে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ বাহিনীগুলোর মধ্যে আন নাসের সালাহউদ্দিন ব্রিগেড ও কাসসাম ব্রিগেড তাদের আক্রমণের বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে। যেখানে আন নাসের ব্রিগেডের সদস্যদের ইসরায়েলের একটি কমান্ড পোস্ট লক্ষ্য করে মর্টার শেল ছুঁড়তে দেখা যায়। অন্যদিকে কাসসাম ব্রিগেডের সদস্যরা পূর্ব জাবালিয়ায় একটি ইসরায়েলি মারকাভা ট্যাঙ্ক ধ্বংসের কথা জানায়।