২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাসের ঐতিহাসিক এক অপারেশনের মধ্য দিয়ে করে শুরু হয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার নতুন লড়াই। একই সঙ্গে এই দিনটি বদলে দেয় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির গতিপথ। কারণ, ৭ই অক্টোবরের আগে আরব-ইসরায়েলের মিত্রতা ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তুফানুল আকসা নামের এই অপারেশনে উল্টে যায় পাশার দান। ভেস্তে যায় আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবীকিকরণের প্রক্রিয়া। তবে হামাস ইসরায়েলে সরাসরি আক্রমণ করে আরব-ইসরায়েলের সম্ভাব্য উষ্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে পারলেও, হামাস ফিরিয়ে আনতে পারেনি আরব নেতাদে(?)র আত্নমর্যাদা।
সম্প্রতি দুইবারের পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাতে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বাইডেনসহ নিকট অতীতের কয়েকজন প্রেসিডেন্টের আমলে আমেরিকার ভূমিকা সম্পর্কে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
১৩ই অক্টোবর ২০২৩। গাজা যুদ্ধের সূচনা পরবর্তী উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যে এই দিন গুরুত্বপূর্ণ এক সফরে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। মধ্যপ্রাচ্যে এসেই ব্লিঙ্কেন একে একে সফর করেন জর্ডান, সৌদি আরব, দুবাই এবং মিসর। সফর করে ব্লিঙ্কেন যা লাভ করেন, তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি তিনি।
- জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ ব্লিঙ্কেনকে বলেন, ‘আমরা পূর্বেই ইসরায়েলকে হামাস সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম। হামাস ইখওয়ানুল মুসলিমীন বা মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে আসা একটি সংগঠন। ইসরায়েলকে অবশ্যই হামাসকে পরাজিত করতে হবে।’
- ১৪ই অক্টোবর জর্ডান থেকে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সৌদি আরব গেলে আরো একধাপ চমকের সম্মুখিন হন। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান ব্লিঙ্কেনকে বলেন, হামাসকে নিরাপদ মনে করা ইসরায়েলের জন্য উচিত হয়নি। আমরা নেতানিয়াহুকে এ ব্যাপারে কয়েকবার সতর্ক করেছি। কারণ, হামাস ইখওয়ানুল মুসলিমীন বা মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে আসা একটি সংগঠন। আর এইসব সন্ত্রাসী(?) সংগঠনগুলো শুধু ইসরায়েলেকে বিনাশ করতেই সচেষ্ট নয়। তারা আরব নেতৃবর্গকেও উৎখাত করতে চায়।
- একই দিন আরব আমিরাতেও যান এ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখানে আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ বিন যায়েদ আন নাহিয়ান ইসরায়েলের সমর্থনে ছিলেন আরো এক ধাপ এগিয়ে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে কয়েকবার সতর্কতামূলক জানিয়েছি যে, হামাস মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে আসা একটি সংগঠন। হামাসে বিরুদ্ধে আমরা ইসরায়েলকে সময় এবং জায়গা দিয়ে সহায়তা করতে পারি।’
- পিছিয়ে ছিলেন না মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সিসিও। ১৫ই অক্টোবরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মিশরে পৌছলে মিশরের গোয়েন্দা প্রধান গাজায় হামাস থেকে ইসরায়েলের মুক্তি পেতে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন। যার ভিত্তিতে মিশরের প্রেসিডেন্ট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে ইসরাইয়েলের সাথে শান্তি চুক্তি বহাল রাখার উপর এবং ফিলিস্তিনের মানুষকে মিশরে আশ্রয় না দেওয়ার ব্যাপারে জোড় প্রতিশ্রুতি দেন।