নিউজনেস্ট

বিশ্ব পরিস্থিতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন  

বিশ্ব পরিস্থিতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন  
বিশ্ব পরিস্থিতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। ছবি: আল জাজিরা

দিন পেরুলেই যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে নির্বাচন। নির্বাচনের এই সময়ে ‘কোন প্রার্থী নির্বাচিত হলে বিশ্ব পরিস্থিতি কেমন হবে’এই নিয়ে চলছে তুমুল বিশ্লেষণ।

সম্প্রতি কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা এ বিষয়ের উপর প্রকাশ করেছে বিশেষ এক প্রতিবেদন। যেখানে গাজা যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সমস্যা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ন্যাটোর প্রতি সমর্থনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে মার্কিন নির্বাচনের দুই প্রধান প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগত মনোভাব এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে উঠে এসেছে বিশদ বিশ্লেষণ।

গাজা যুদ্ধ

গাজা যুদ্ধ থামাতে কার্যকর ভূমিকা নিতে চান ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। এক্ষেত্রে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির শর্তসহ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতার মধ্য ‘দিয়ে দ্বি-রাষ্ট্র’ সমাধানকে উৎসাহিত করে এই সংঘাত সমাধানে ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের নীতিই গ্রহণ করতে পারেন কমলা হ্যারিস। কারণ, ইতিমধ্যেই হ্যারিস গাজার মানবিক বিপর্যয় স্বীকার করে ফিলিস্তিনি নিরীহ জনগণের হতাহতের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে এই ইস্যুতে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার(!) এবং ‘হামাস’ ধ্বংসের প্রচেষ্টাকেও(?) সমর্থন করেন কমলা হ্যারিস। যা আদতে বাইডেনের ‘ইসরায়েল নীতির’ দ্বিমুখী। 

অপরদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান গাজা যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার পক্ষে। কিন্তু তিনিও ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের শর্ত হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা বলেননি। এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো সহায়তার প্রস্তাবও দেননি। উল্টো তিনি দাবি করেছেন, বর্তমানে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে ৭ই অক্টোবরের হামলাই ঘটত না।

এছাড়া সম্প্রতি ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, তাকে পুনরায় নির্বাচিত না করা হলে দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েল বিলুপ্ত হতে পারে। সেই সাথে ট্রাম্প ইসরায়েলের ভূখণ্ডকে খুব ছোট বলে উল্লেখ করে তার বিস্তৃতির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মোটকথা উভয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নীতিতে গাজার মানুষের শান্তির যে কোন নিশ্চয়তা নেই সেটা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট।

অভিবাসন সমস্যা

এই ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো একটি ইস্যু। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস অভিবাসন ইস্যুতে মানবিক নীতিই অনুসরণ করতে চান। কমলা হ্যারিস মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য একটি ন্যায়সংগত পথ তৈরির পক্ষে এবং অভিবাসী পরিবারের শিশুদের আলাদা করার নীতির বিরোধি। নির্বাচনী প্রচারণায় কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের আটকে দেওয়া অভিবাসন সংস্কার বিল পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবাহ বৃদ্ধি হলেও প্রেসিডেন্টের হাতে সীমান্ত বন্ধ করার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে।  

অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন ইস্যুতে রয়েছেন কঠোর অবস্থানে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণায় সীমান্ত বন্ধ করার এবং ‘অভিবাসী আগমন’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম কর্মদিবসেই অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে বহিষ্কারের ঘোষণা করবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প মনে করেন, বর্তমান অভিবাসন নীতি আমেরিকাকে ‘বিশ্বের আবর্জনা স্থল’ বানাচ্ছে। এছাড়া অনিবন্ধিত পিতামাতার শিশুদের জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব প্রদান বাতিলের পরিকল্পনাও রয়েছে ট্রাম্পের। এর বাইরে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদেরও ভিসা বাতিলের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ                  

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে চান। কারণ, হ্যারিস মনে করেন ইউক্রেনে রাশিয়ার বিজয় হলে পুতিন অন্যান্য দেশে আক্রমণেরও সাহস করবে।

আর এদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে সহায়তা ‘ঋণ’ হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন, ‘উপহার’ হিসেবে নয়। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ শেষ করবেন। তবে কীভাবে তা করবেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কোন পরিকল্পনা প্রকাশ করেননি ট্রাম্প।

ন্যাটো

কমলা হ্যারিস বাইডেনের আমলের ন্যাটোকে শক্তিশালী সমর্থন করার নীতিতেই অটল থাকতে চান। পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক জোটেও মার্কিন সহায়তাকে সমর্থন করেন কমলা হ্যারিস। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্ষেত্রে ‘আমেরিকাই প্রথম’ এই নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় ন্যাটো থেকে প্রস্থানের হুমকি দিয়ে অভিযোগ করেন, ন্যাটোর দেশগুলো জোটে পর্যাপ্ত অর্থায়ন না করে যুক্তরাষ্ট্রকে শোষণ করছে।

মোটকথা, কমলা হ্যারিস তার নীতিতে মানবিক কূটনীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প কঠোর কূটনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার নীতি অনুসরণ করছেন। তবে মার্কিন ভবিষ্যতে কার নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আমেরিকার নেতৃত্বে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, তা নির্ভর করছে জনগণের ভোটের উপর।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত