বাংলাদেশে বিদেশি বাস আমদানির পরিবর্তে দেশে চেসিস কিনে নিজস্ব বাস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। বিদেশ থেকে আমদানি করা বাসের পেছনে যেখানে এক কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়, সেখানে নিজস্ব কর্মী ও ওয়ার্কশপ ব্যবহার করে এই খরচ এক কোটি টাকারও নিচে নামিয়ে আনতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
বিআরটিসি জানিয়েছে, বর্তমানে একটি বিদেশি নন-এসি বাস আমদানিতে প্রায় ৯৫,৭০০ ডলার (১ কোটি ১২ লাখ টাকা) খরচ হয়। এর মধ্যে আমদানি কর, ভ্যাট, মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন খরচ যোগ হয়। কিন্তু দেশে চেসিস কিনে একই ধরনের বাস তৈরি করলে খরচ প্রায় ২৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। কারণ, ভারতীয় কোম্পানি অশোক লিলেনের ইঞ্জিনসহ একটি চেসিসের দাম ৪৪ লাখ টাকা। ফলে চেসিসসহ বডি, সিট এবং অন্যান্য সরঞ্জাম মিলিয়ে দেশে একটি নন-এসি বাস তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা।
অন্যদিকে জাপানের হিনো মোটরসের চেসিসের দাম প্রায় ৫৩ লাখ টাকা। এই চেসিসের উপর বাস তৈরি করতে খরচ হবে মোট ৯৩ লাখ টাকা। ফলে আমদানির তুলনায় এখানে খরচ প্রায় ২০ লাখ টাকা কম পড়বে।
এসি বাসের ক্ষেত্রেও সাশ্রয়
বিআরটিসি জানিয়েছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা একটি এসি বাসের খরচ প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে আমদানি কর ও ভ্যাটসহ অন্যান্য ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু দেশেই যদি এসি বাস তৈরি করা হয়, তাহলে ব্যয় কমে খরচ হবে ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফলে সাশ্রয় হবে প্রায় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
বাস তৈরি হবে গাজীপুরের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপে
এদিকে বাস তৈরির ব্যাপারে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে দুটি চেসিস কিনে গাজীপুরের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপে বাস তৈরি কাজ শুরু হবে। বর্তমানে এই ওয়ার্কশপটি আধুনিকীকরণ করতে নিয়মিত কাজ চলছে। তবে ওয়ার্কশপটির আধুনিকীকরণ শেষ হলে এখানেই বছরে ৪০টি বাস তৈরি করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, দেশের অন্যান্য ডিপোতেও বাস রক্ষণাবেক্ষণ ও তৈরি কার্যক্রম নিয়মিত চলছে।
দক্ষ কর্মীর সহায়তায় কম খরচে বাস তৈরি
তাজুল ইসলাম আরও জানান, বিআরটিসির নিজস্ব দক্ষ কর্মীরা নিয়মিত বেতনভুক্ত কর্মী হিসেবে কাজ করছেন, ফলে বাস তৈরিতে বাড়তি মিস্ত্রীর খরচ লাগবে না। তিনি আরও বলেন, ‘যখন বিদেশি বাস আসে, তখন তা দিনের পর দিন ডিপোতে বসে থাকে। এখন আমরা নিজেরাই গাড়ি তৈরি করে সময়মতো ব্যবহারের উপযোগী করতে পারবো।’
স্থানীয় বাজার থেকে চেসিস কেনার পরিকল্পনা
বিআরটিসি জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে বেশ কিছু কোম্পানি চেসিস সরবরাহ করছে। এরমধ্যে আকিজ মটরস, ইফাদ মটরস, এইচএনএস অটোমোবাইলসহ ছয়টি দেশীয় কোম্পানি বিআরটিসির সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে চেসিস সংগ্রহ করা হবে, যেখানে প্রতি চেসিসের দাম প্রায় ৪২ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মধ্যে পড়বে।
বিআরটিসির বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন
বিআরটিসির চেয়ারম্যান আরও জানান, ২০২১ সালের আগেও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ কর্মী নিয়ে নতুনভাবে উন্নয়ন করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৩০০ জনের বেশি দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ওয়ার্কশপগুলোতে নিয়মিত মেরামত কাজ হচ্ছে এবং গাড়িগুলো স্বল্প সময়েই পুনরায় রাস্তায় নামানো সম্ভব হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন
বিআরটিসি আশা করছে, এই উদ্যোগে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং বাস তৈরির ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে। এক্ষেত্রে সংস্থাটির মুখপাত্র তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমাদের নিজস্ব গাড়ি তৈরির সক্ষমতা আছে। আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছি, শিগগিরই দুটি চেসিস কিনে গাড়ি তৈরির কাজ শুরু করবো। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিআরটিসির বহরে নিজস্ব নির্মিত বাস যুক্ত করা সম্ভব হবে।’
উল্লেখ্য, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবহন সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ও সম্ভব হবে।
ডেস্ক রিপোর্ট
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link