নিউজনেস্ট

অভ্যুত্থানে নিহতদের শহিদ বলার ব্যাপারে যা বললেন আব্দুল মালেক সাহেব

অভ্যুত্থানে নিহতদের শহিদ বলার ব্যাপারে যা বললেন আব্দুল মালেক সাহেব
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের সম্মানিত খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব সম্প্রতি গত ১৫ তারিখ শুক্রবার জুমার বয়ানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং শহিদদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। এই বয়ানে তিনি শহিদদের মর্যাদা, তাদের রক্তের যথাযথ মূল্যায়ন এবং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের সঠিক ব্যাখ্যার উপর আলোকপাত করেছেন।

শহিদের সংজ্ঞা ও প্রকৃত শহিদের মর্যাদা

খতিব সাহেব ব্যাখ্যা করেন, ‘শহিদ হলেন তাঁরা, যারা আল্লাহর রাস্তায় তাঁর কালিমা বুলন্দ করার জন্য জীবন দিয়েছেন। কুরআন-সুন্নাহ, ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে যাঁরা প্রাণ হারান, তারাই প্রকৃত শহিদ। তবে তিনি আরও উল্লেখ করেন, যেকোনো ন্যায্য অধিকারের জন্য যারা সংগ্রাম করেন এবং এই পথে প্রাণ হারান, তারাও শহিদের মর্যাদার অধিকারী হতে পারেন।‘ তিনি দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন: ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহিদ।’ (নাসাঈ শরীফ, হাদিস: ১৪১৮)

এ বক্তব্যে খতিব সাহেব স্পষ্ট করেন যে, শহিদের মর্যাদা ন্যায্য উদ্দেশ্যে লড়াইয়ের ওপর নির্ভরশীল। এতে বোঝা যায়, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত হওয়া সকলেই শহিদের মর্যাদা লাভ করবেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি

জুলাই ও আগস্টের শহিদদের জন্য দোয়ার আহ্বান জানিয়ে খতিব সাহেব বলেন, ‘শুধু দোয়া করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাদের রক্তের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। অন্যায়ভাবে এই রক্তের ব্যবহার করা বা এর মাধ্যমে অন্য বৈষম্য সৃষ্টি করা কখনো জায়েজ হবে না।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বৈষম্য শব্দের গলত ব্যবহার সমাজে শহিদদের রক্তের প্রতি অবিচার সৃষ্টি করবে। বৈষম্যের সঠিক সংজ্ঞা বুঝতে হবে এবং ন্যায্যতা ও সমতার মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে হবে।’

বৈষম্যের সঠিক ব্যাখ্যা

খতিব সাহেব বৈষম্যের সঠিক অর্থ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘সমান দুটি বিষয়ে ভিন্ন আচরণ করাকেই বৈষম্য বলে। কিন্তু একই জায়গায় যৌক্তিক কারণে ভিন্ন আচরণ বৈষম্য নয়।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘অমুসলিমদের বাইতুল্লাহর হজে যাওয়ার অধিকার না থাকাটা বৈষম্য নয়; বরং যৌক্তিক নিয়ম।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ হিসেবে সবাই সমান। কিন্তু বৈষম্যের নামে এমন কিছু প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, যা ইসলামের মূলনীতির পরিপন্থী।’

সমতা ও আধুনিক সামাজিক প্রবণতা

সমাজে বর্তমানে ‘জেন্ডার সমতা‘ নিয়ে প্রচার প্রসঙ্গেও খতিব সাহেব উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ পুরুষকে পুরুষ এবং নারীকে নারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার নামে এ প্রাকৃতিক পার্থক্য মুছে ফেলা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি বিদ্রোহ।’

তিনি সমালোচনা করেন, ‘কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের তালিকায় জেন্ডার সমতা রক্ষার মতো পদ রয়েছে। এটি একটি মুসলিম সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’

সতর্কবার্তা ও করণীয়

খতিব সাহেব জাতিকে সতর্ক করে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহিদদের রক্তের সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হলে আবারও আল্লাহর গজব নেমে আসতে পারে। শহিদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মানে তাদের রক্তের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাম্যের নামে যদি আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে সেটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্য ও শহিদদের আত্মত্যাগের অবমাননা।’

খতিব আব্দুল মালেক সাহেবের বক্তব্যে দেশের জনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্পষ্ট করে। শহিদের মর্যাদা রক্ষা এবং বৈষম্যের সঠিক মূল্যায়ন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। আমাদের উচিত শহিদদের জন্য দোয়া করা, তাদের রক্তের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং সমাজে ইসলামের সঠিক বার্তা প্রচার করা।

সাদিক শাহরিয়ার
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত