হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাইবার সক্ষমতার উন্নয়ন করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি জানা গেছে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা কাঠামোকে লক্ষ্য করে হামাস এমন কিছু সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে, যা শুধু চমকপ্রদ নয়, বরং তাদের পরিকল্পনা ও কার্যক্ষমতার সক্ষমতার প্রমাণও বহন করে।
তুফানুল আকসার পূর্বে সাইবার অভিযানের প্রস্তুতি
নভেম্বরের শুরুর দিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী হামাস দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক সাইবার হামলা চালিয়ে আসছিল। এই আক্রমণগুলোর মাধ্যমে হামাস ইসরায়েলি সেনাদের ব্যক্তিগত ফোন হ্যাক করে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করে।৭ অক্টোবরের ‘তুফানুল আকসা’ অভিযানের পরিকল্পনায় এই তথ্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসরায়েলি সেনারা যখন হামাসের আক্রমণের মুখোমুখি হয়, তখন স্পষ্ট হয় হামাস ইসরায়েলি সেনাদের দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানত।
তুফানুল আকসায় তথ্যের ব্যবহার
‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর একটি বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে আসে হামাসের যোদ্ধাদের মাথায় লাগানো ক্যামেরাগুলো থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজ তাদের প্রস্তুতির গভীরতার ইঙ্গিত বহন করে। হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোপন তথ্য, দুর্বলতা, এবং সামরিক ঘাঁটিগুলোর বিস্তারিত তথ্য জানত। এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করে হামাস সফলভাবে অভিযান চালায়।
বিস্ময়কর সাইবার দক্ষতা
হামাসের সাইবার ইউনিটের দক্ষতা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে হতবাক করে দিয়েছে। ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাস ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সামরিক ঘাঁটিগুলোর যোগাযোগ সার্ভারের সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এ ধরনের নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্য শুধু সাইবার সক্ষমতাই নয়, বরং তাদের পরিকল্পনার জটিলতা ও কার্যকরী গবেষণার ইঙ্গিত দেয়।
উল্লেখযোগ্য সাইবার অ্যাটাক
২০২২ সালের এপ্রিলে হামাস সাইবার সক্ষমতার আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ‘সাইপ্রিসন’-এর তথ্য অনুযায়ী, এই আক্রমণটি ছিল অত্যন্ত জটিল। এটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছিল। হামাসের এই আক্রমণ তাদের সাইবার ক্ষমতার নতুন মাত্রা প্রকাশ করে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
হামাসের সাইবার আক্রমণ শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার উদাহরণ নয়, বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের কৌশলগত প্রস্তুতিরও বহিঃপ্রকাশ। এই সাইবার অভিযানের সাফল্য প্রমাণ করে, আধুনিক যুদ্ধে প্রযুক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, বরং তথ্য সংগ্রহ ও পরিকল্পনার প্রতিটি স্তরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা