গাজা উপত্যকার উত্তরাংশে বেইত লাহিয়া ও শেখ রিদওয়ানে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর ভোরের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮৮ জন ফিলিস্তিনি। শহীদদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন, যা ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের ধারাবাহিক নির্মমতার আরও একটি উদাহরণ।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের আশেপাশের আবাসিক এলাকায় বোমা হামলায় ৬৬ জন শহীদ হন। আহত হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি। নিহতদের অধিকাংশই শিশু ও নারী।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, বেইত লাহিয়া প্রকল্প এবং জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান ও কামানের গোলা বর্ষণ এবং ভারী গুলিবর্ষণ চলে।
তবে, হামলার পর ঘটনাস্থলে কোনো চিকিৎসক বা উদ্ধারকর্মী পৌঁছাতে পারেননি। গত এক মাস ধরে উত্তর গাজায় মানবিক সহায়তা পরিষেবা বন্ধ থাকায় আহতদের সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় নতুন করে আরেকটি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ড. হুসাম আবু সাফিয়া বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসাকর্মীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে আহতদের উদ্ধার করছে, কারণ কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে এখনও শতাধিক মানুষ আটকা পড়ে আছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে অসংখ্য আহত ও মৃতদেহ রয়েছে। উত্তর গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আমাদের সব অনুরোধ বিশ্ববাসীর কাছে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।’
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শেখ রিদওয়ান এলাকায় আরেকটি বোমা হামলায় ২২ জনকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জন শিশু। আল-আরুকি পরিবারের বাড়িতে সরাসরি এই হামলা চালানো হয়।
একই সময়ে গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও বিমান ও কামানের হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নারী নিহত হন।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ৩,৮৩৮টি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এর মাধ্যমে অসংখ্য পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। আমেরিকার সমর্থনে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১,৪৮,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছে আরও ১০,০০০ মানুষ। ধ্বংসস্তূপ, দুর্ভিক্ষ এবং মানবিক বিপর্যয়ের ফলে এটি বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের গণহত্যা প্রতিরোধের নির্দেশনাও দখলদার ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ থামাতে পারেনি। তারা অব্যাহতভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর নির্মম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা ও ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম