নিউজনেস্ট

তুরস্ক-আরব বাণিজ্যের অভূতপূর্ব উত্থান

তুরস্ক-আরব বাণিজ্যের অভূতপূর্ব উত্থান: এক সফলতার কাহিনী
তুরস্ক-আরব বাণিজ্যের অভূতপূর্ব উত্থান: এক সফলতার কাহিনী। ছবি : আল জাজিরা

তুরস্ক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। ২০২৪ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, আরব দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে আঙ্কারা। তুরস্কের রপ্তানি ইতোমধ্যেই নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে।

চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে তুরস্ক আরব দেশগুলোতে রপ্তানি করেছে ৩৯.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭.৭% বেশি। তুরস্কের মোট রপ্তানির ১৮.৪% এসেছে আরব বাজার থেকে, যা এর বৈশ্বিক রপ্তানি সক্ষমতার উজ্জ্বল উদাহরণ।

তুরস্কের পণ্য আমদানির তালিকায় আরব দেশগুলোর মধ্যে ইরাক রয়েছে শীর্ষে। এর পরেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, সৌদি আরব এবং মরক্কো।

আরব দেশগুলোর আমদানির পরিসংখ্যান:

• ইরাক: ১০.৭৬ বিলিয়ন ডলার

• সংযুক্ত আরব আমিরাত: ৬.৮৪ বিলিয়ন ডলার

• মিশর: ৩.৪ বিলিয়ন ডলার

• সৌদি আরব: ৩.২৬ বিলিয়ন ডলার

• মরক্কো: ২.৮ বিলিয়ন ডলার

তুরস্কের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী, বস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য এবং প্রযুক্তি সরঞ্জাম। এই বৈচিত্র্য তুরস্কের উৎপাদনশীলতার ব্যাপকতাকে যেমন প্রমাণ করে, তেমনি এর বাজার চাহিদা মেটানোর সক্ষমতার পরিচয়ও দেয়।

তুরস্ক-আরব বাণিজ্য সম্পর্ক কোনো সাম্প্রতিক ঘটনা নয়। বহু দশক ধরে এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন আঞ্চলিক সংহতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্কের ধরনে একটি নতুন গতি দেখা যাচ্ছে।

বাণিজ্য এখন আর শুধুমাত্র পণ্য লেনদেনে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পরিকাঠামো ও জ্বালানি খাতে কৌশলগত প্রকল্পের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো, যেমন সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ এবং কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন, এই সহযোগিতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরব চেম্বারস ইউনিয়নের সভাপতি সামির বিন আবদুল্লাহ নাস জানিয়েছেন তুরস্ক ও আরব দেশগুলোর অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান উন্নতির দিকে রয়েছে। বর্তমানে উভয়পক্ষের বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ বিলিয়ন ডলারে। প্রতি বছর তুরস্কের রপ্তানি ১০% বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আরব দেশগুলোর বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ এমরে ওজদেমিরের মতে, তুরস্ক ও আরব দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের দ্রুত বৃদ্ধি কয়েকটি কারণের সমন্বিত ফল।

মূল কারণগুলো:

১. তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন বাণিজ্যের ভিত্তি শক্ত করেছে।

২. তুরস্কের কৌশলগত অবস্থান এবং আধুনিক পরিবহন অবকাঠামো আরব দেশগুলোর বাজারে দ্রুত এবং কম খরচে পণ্য সরবরাহে সহায়তা করছে।

৩. উপসাগরীয় দেশগুলোর বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে তুরস্কের উচ্চ মানের পণ্য ও পরিষেবা চাহিদা বেড়েছে।

তবে এই সাফল্যের সঙ্গেই রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ। গবেষক মোহাম্মদ আবু আলিয়ান বলেছেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা তুরস্কের পণ্যগুলোর জন্য একটি বড় বাধা। চীন ও ভারতের সস্তা পণ্য এবং ইউরোপের উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য এই প্রতিযোগিতাকে তীব্র করেছে।

অন্যদিকে, তুরস্কের মুদ্রার মানের ওঠানামা এবং কিছু আরব দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তুরস্ক-আরব বাণিজ্য সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতার নয়, বরং আঞ্চলিক সংহতির এক অনন্য উদাহরণ। বর্তমান ইতিবাচক চিত্র ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য আশার আলো জাগাচ্ছে।

এই সহযোগিতাকে আরও দৃঢ় করতে প্রয়োজন কৌশলগত পরিকল্পনা এবং পণ্যের বৈচিত্র্য। তুরস্ক ও আরব দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করে তাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত