ভারতের সুপ্রিম কোর্ট উত্তর প্রদেশের সাম্ভাল জেলার একটি মসজিদের সার্ভে নিয়ে স্থানীয় আদালতের নির্দেশের উপর আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই স্থগিতাদেশ ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। মসজিদে সার্ভে নিয়ে স্থানীয় আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট এই আদেশ দেয়।আদালত বলেছে, ‘এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সার্ভে সংক্রান্ত যেকোনো পদক্ষেপ স্থগিত রাখতে হবে।’
কী ঘটেছিলো মূলত
স্থানীয় আদালত অভিযোগের ভিত্তিতে মসজিদের সার্ভে করার নির্দেশ দিলে সাম্ভালের চাঁদৌসি এলাকায় অবস্থিত শাহি জামা মসজিদ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয় । অভিযোগে বলা হয়, মসজিদটি একটি প্রাচীন মন্দির ভেঙে মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে ১৫২৬ সালে নির্মিত হয়েছিল।
এই নির্দেশের বিরোধিতা করে মসজিদ পরিচালনা কমিটিসহ স্থানীয় মুসলিম নেতারা অভিযোগ করেন, এ ধরনের নির্দেশের ফলে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি সংবিধানে সুরক্ষিত ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
আদালতের বক্তব্য
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে অত্যন্ত সংযম ও সংগতি বজায় রাখা প্রয়োজন। আদালত উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ নির্ধারণ করেছে।
মসজিদ কমিটির দাবি
মসজিদ কমিটির আইনজীবী কপিল সিব্বল দাবি করেন, ‘স্থানীয় আদালতের নির্দেশের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। এটি প্রমাণবিহীন ধর্মীয় স্থাপনাকে টার্গেট করার এক ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। তিনি বলেন, ‘সার্ভে শুধু তখনই করা উচিত, যখন প্রক্রিয়া যথাযথ ও ন্যায়ানুগ পরিচালিত হয়।’
কমিটির পক্ষে আরও বলা হয়, মসজিদটি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ (ASI) দ্বারা সুরক্ষিত একটি প্রাচীন স্থাপনা। উপরন্তু, ১৯৯১ সালের প্লেসেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এ বিদ্যমান ধর্মীয় স্থাপনায় পরিবর্তন আনা নিষিদ্ধ।
সহিংসতা এবং উদ্বেগ
গত ২৪ নভেম্বর মসজিদের সার্ভে নির্দেশের পর সাম্ভাল এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সহিংস সংঘর্ষে পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটে। এই পরিস্থিতি আদালতের আদেশকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে।
মসজিদ কমিটি সতর্ক করে বলেছে, ‘এ ধরনের হঠাৎ নির্দেশ সামাজিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। তারা সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ করেছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের নির্দেশ দেওয়ার আগে যাতে সব পক্ষের কথা শোনা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন এই আদেশে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং একে ন্যায়বিচার ও শান্তি বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
সূত্র : মুসলিম মিরর