নিউজনেস্ট

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক শঙ্কায় বেড়েছে অর্থপাচার ও বিদেশে সম্পদ ক্রয়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক শঙ্কায় বেড়েছে অর্থপাচার ও বিদেশে সম্পদ ক্রয়
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক শঙ্কায় বেড়েছে অর্থপাচার ও বিদেশে সম্পদ ক্রয়। ছবি : সংগৃহীত

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশের সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। বিশেষ করে ২০২১ সালে র‍্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির পর, অর্থ পাচারের প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। সরকারের পতনের আশঙ্কায় অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আমলা বিদেশে অর্থ পাচার করে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন।

বাংলাদেশের পোশাক খাতের কিছু বড় ব্যবসায়ী ও অলিগার্ক এখন সিঙ্গাপুর, দুবাই, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অনেক রাজনীতিবিদ চলে গেছেন ভারতে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে থেকেই তারা বিদেশে দীর্ঘমেয়াদে থাকার পরিকল্পনা করছিলেন এবং অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বিদেশে স্থানান্তর করেছেন।

অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে মিথ্যা আমদানি-রপ্তানি ঘোষণা, ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মতো কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে আমদানি-রপ্তানির সরকারি পরিসংখ্যান ও সংশ্লিষ্ট দেশের তথ্যের মধ্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা গেছে। বিশেষ করে চীন থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই ব্যবধান আরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি আকস্মিকভাবে ৪৪% বৃদ্ধি পায়। যদিও পরবর্তী সময়ে আমদানির নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়, কিন্তু অর্থ পাচারের ধারা থামানো যায়নি।

রপ্তানির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। কাগজে-কলমে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো হলেও প্রকৃত অর্থ দেশে ফেরত আসেনি। ফলে দেশে ট্রেড ক্রেডিট ঘাটতি তৈরি হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি দাঁড়ায় ১.৭৬ বিলিয়ন ডলারে।

২০২১ সালে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থ পাচারের কারণে রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বিপিএম৬ পদ্ধতিতে ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

পাচারকৃত অর্থের একটি বড় অংশ কানাডা, যুক্তরাজ্য, দুবাই এবং অন্যান্য দেশে প্রপার্টি কেনায় বিনিয়োগ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে ৩৬০টি বাড়ি ক্রয় করেছেন। যদিও এ ধরনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে অবৈধ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনা অত্যন্ত কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। পাচারের গতিপথ চিহ্নিত করা, নথি সংগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে পাঁচ থেকে পনেরো বছর সময় লাগতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাচারকারীরা অর্থ পাচারের আগে থেকেই সেকেন্ড হোম এবং বিকল্প পরিকল্পনা করে রেখেছেন। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার অংশ।

আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থ সরানোর প্রবণতা বেশি, কারণ সেখানকার আর্থিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল এবং মার্কিন প্রভাব তুলনামূলক কম।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অর্থ পাচার একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি শুধুমাত্র দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস করেনি, বরং আমদানি-রপ্তানি এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের ওপর আস্থাও কমিয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য শক্তিশালী আইনি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। তবে এটি সময়সাপেক্ষ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অসম্ভব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডেস্ক রিপোর্ট
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত