নিউজনেস্ট

পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, কী বাদ যাচ্ছে, কী যুক্ত হচ্ছে

পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, কী বাদ যাচ্ছে, কী যুক্ত হচ্ছে
পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, কী বাদ যাচ্ছে, কী যুক্ত হচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের প্রতিটি বাংলা বইতে যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে গল্প, কবিতা বা কার্টুন। বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় যোগ করা হচ্ছে অভ্যুত্থান-ভিত্তিক গ্রাফিতি। পাশাপাশি ইতিহাসনির্ভর বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

তবে পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ‘অতিরঞ্জিত’ চিত্র এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রচিত কবিতা ও কিছু বিবরণ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার ফলে মাধ্যমিক স্তরে বিষয় ও বইয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। নতুন করে ছাপা হচ্ছে আরবি, সংস্কৃত ও পালি ভাষার বই। এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, “ইতিহাসে যার যে ভূমিকা, তা নির্মোহভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।”

বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতার অবদান তুলে ধরা হয়েছে। বাদ পড়েছে শেখ হাসিনার ছবিসহ শেষ পৃষ্ঠার বার্তা এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু অতিরঞ্জিত ইতিহাস। পাঠ্যবইয়ের অনেক ছবিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রতিটি বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় নতুন গ্রাফিতি ও উক্তি সংযোজন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে লেখা হয়েছে, “ভালো মানুষ ভালো দেশ, স্বর্গভূমি বাংলাদেশ”, আর ইংরেজি বইয়ে রয়েছে “পিপলস ইজ পাওয়ার”।

পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।

সরকার ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে। কিন্তু ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় সময়মতো সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছানোর বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, নবম শ্রেণির দরপত্র আহ্বান এখনো হয়নি। অন্যান্য শ্রেণির বই ছাপার কাজেও অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।

এনসিটিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বছরের এই সময়ে সাধারণত ৪০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যেত। কিন্তু এবার মার্চের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দেওয়া কঠিন হবে।” এ ছাড়া কাগজ সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট মিল থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এনসিটিবি এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল এবং ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার প্রভাব আগামী শিক্ষাবর্ষে বড় আকারে পড়বে। বই বিতরণে যে বিলম্ব দেখা দিয়েছে, তা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তবে পরিবর্তিত পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের ইতিহাস ও বাস্তবতাভিত্তিক জ্ঞানচর্চায় নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

ডেস্ক রিপোর্ট
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত