জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থার পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা, সংবিধান, এবং বিচার বিভাগীয় সংস্কারের জন্য একাধিক কমিশন গঠন করেছে। এসব সংস্কারের মাধ্যমে আগামী সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে নির্বাচনের সময় নির্ভর করবে সংস্কারের অগ্রগতির ওপর।
ড. ইউনূস বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ আমরা গোড়া থেকে শুরু করেছি।’ তবে নিজে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি স্পষ্টতই জানান, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই, সবসময় রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছি।’
ড. ইউনূসের মতে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে দেশের শাসনকাঠামো ভেঙে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, টানা তিন মেয়াদে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনা ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিলেন। তার পতন ঘটে চলতি বছরের আগস্টে, ছাত্র ও নাগরিকদের নেতৃত্বে সংঘটিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
বর্তমানে হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। রায় ঘোষণার পর তাকে ফেরত আনতে ভারতকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতের দাবি, হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। তবে ড. ইউনূস এসব অভিযোগকে ‘প্রোপাগান্ডা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ভারতীয় সাংবাদিকরা এসে সত্য উদঘাটন করতে পারেন।’ সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারত সরকারকে ভুল তথ্যের ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগের মতোই মজবুত থাকবে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে জাতিসংঘ-শাসিত নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পক্ষে বাংলাদেশ কাজ করছে।
ড. ইউনূস আসিয়ানের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দেন। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং বাংলাদেশ আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।
ড. ইউনূসের দৃষ্টিতে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। তিনি বাংলাদেশের জন্য একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের আহ্বান জানান, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক ভূমিকাকে আরও জোরালো করবে।
