নিউজনেস্ট

এক ঝলকে সিরিয়া বিপ্লবের ইতিহাস

এক ঝলকে সিরিয়া বিপ্লবের ইতিহাস
এক ঝলকে সিরিয়া বিপ্লবের ইতিহাস। ছবি আনাদোলো এজেন্সি

সিরিয়ার বিপ্লব এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম আলোচিত বিষয়। ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই বিপ্লব শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয়। জনগণের দাবির কেন্দ্রে ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্রের অবসান। তবে নানাবিধ সংঘর্ষ, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এবং বিভিন্ন পক্ষের সংঘাতে এই বিপ্লব জটিল আকার ধারণ করে। বিপ্লবের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চলুন এক ঝলকে দেখে আসি ইতিহাসের এই বাঁকবদল।

শুরু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ
২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার জনগণ স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং দুর্নীতির অবসানের দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যেই এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে আন্দোলনকারীরা সংস্কারের দাবি তুললেও শিগগিরই তা শাসনব্যবস্থার পতনের আহ্বানে রূপ নেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ দমনে কঠোর সহিংসতা চালানো হয়।

সশস্ত্র বিপ্লব
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কয়েক মাস পর সিরিয়ার সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়। ২০১১ সালের আগস্টে কর্নেল রিয়াদ আল আসাদ ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ গঠনের ঘোষণা দেন। এর লক্ষ্য ছিল আন্দোলনকারীদের সুরক্ষা প্রদান করা। তবে আন্দোলনের দ্বিতীয় বছরে বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সংখ্যা বাড়তে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এ সময় তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ফলে আরব ও পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইরান ও হিজবুল্লাহর সহায়তাপ্রাপ্ত সরকারি বাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়।

তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে—যখন সিরিয়ার সরকার দেশের ৭৫ শতাংশ এলাকা হারিয়ে ফেলে— ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আক্রমণ শুরু করে। ইরাকের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে আইএস। এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সিরিয়ান শাসনব্যবস্থা উৎখাতের ঐক্য দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই’ নামে একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠিত হয়।

রাশিয়ার হস্তক্ষেপ
২০১৫ সালের শরৎকালে রাশিয়া সিরিয়ার সরকারকে সামরিক সহায়তা দেওয়া শুরু করে। উপর্যুপরি বিমান হামলার মাধ্যমে দামেস্ক শহর সুরক্ষিত করে। ২০১৬ সালে আলেপ্পো পুনর্দখলের জন্য বড় ধরনের অভিযান চালায় রাশিয়া। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ‘আস্তানা চুক্তি’র আওতায় রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের সমর্থনে আসাদ সরকার সিরিয়ার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে।

উত্তরাঞ্চলে রাশিয়া
এরপর বিদ্রোহীদের উপস্থিতি ইদলিব ও তার আশপাশের এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু অংশ বাদ দিয়ে, ইদলিব অঞ্চল সিরিয়া ও রাশিয়ার নিয়মিত বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ফলে এই অঞ্চল তীব্র মানবিক বিপর্যয় এবং বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর চাপের মুখে পড়ে।

আলেপ্পোতে প্রত্যাবর্তন
২০২৪ সালের নভেম্বরে মাত্র তিন দিনের অভিযানে আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ পুনরায় বিরোধীদের হাতে চলে আসে। এরপর তারা হামা শহরের প্রান্ত পর্যন্ত অগ্রসর হয়। রুশ বিমানবাহিনী এই অভিযানে সরকারি বাহিনীকে সহায়তা না করায় তাদের দ্রুত পতন ঘটে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নিউজনেস্ট ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত