নিউজনেস্ট

ভারত যেভাবে দখলদার ইসরায়েলকে শক্তি জোগাচ্ছে

ভারত কীভাবে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে শক্তি জোগাচ্ছে?
ভারত কীভাবে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে শক্তি জোগাচ্ছে?। ছবি : আল জাজিরা

বিশ্ব রাজনীতিতে সামরিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। বিশেষত আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর অস্ত্রব্যবস্থা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরই একটি উদাহরণ হলো ইসরায়েলের নতুন অস্ত্রব্যবস্থা ‘আরবিল’, যা সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে বৈশ্বিক মনোযোগ কেড়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই অস্ত্রব্যবস্থা তৈরিতে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে এ ধরনের সামরিক সহযোগিতা শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।

‘আরবিল’ কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
২০২২ সালে ইসরায়েলের অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘আইডাব্লিউআই’ ভারতের শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘আদানি ডিফেন্স’ এর সহযোগিতায় ‘আরবিল’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত একটি অত্যাধুনিক অস্ত্রব্যবস্থা চালু করে। এই প্রযুক্তি রাইফেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানব ভুলের সম্ভাবনা কমিয়ে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট নিশানা করার সুযোগ দেয়। এতে রয়েছে ইলেকট্রনিক ট্রিগার এবং উন্নত ফায়ারিং মোড, যা সংকটময় পরিস্থিতিতে সৈন্যদের দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। তবে মানবিক সংকটের ক্ষেত্রে এর সম্ভাব্য প্রভাব বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ভারত-ইসরায়েলের সামরিক সম্পর্ক
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত এবং ইসরায়েলের সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। ইসরায়েল গাজার ওপর নৃশংসতা অব্যাহত রাখতে ড্রোন, রকেট ইঞ্জিন এবং বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে ভারতের সহযোগিতা পাচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই সহযোগিতা গাজার নিরীহ জনগণের ওপর চালানো ইসরায়েলি হামলাকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন করছে। ভারতের অভ্যন্তরেও এই সহযোগিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, যেখানে মানবাধিকারের প্রশ্ন বারবার সামনে এসেছে।

যুদ্ধের ব্যবসা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান
ভারতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগ গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। ২০২৩ সালে এই খাতে ভারতের মোট বিনিয়োগ ছিল ৭.৭৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৭ সালের মধ্যে ২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি একদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করলেও অন্যদিকে এটি মানবিক সংকটের মাত্রা বাড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করছে।

মানবিক সংকটের সম্ভাবনা
‘আরবিল’ এর মতো অস্ত্রব্যবস্থা কেবল সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে সহিংসতা বাড়াচ্ছে না, এটি দমনমূলক সরকারগুলোর হাতে পৌঁছে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের কারণ হতে পারে। এই প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর আরও বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরির পথ সুগম করছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে সংঘাত ডেকে আনতে পারে।

ভারত-ইসরায়েলের সামরিক সহযোগিতা প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত হলেও, এর পেছনে থাকা মানবিক ও নৈতিক উদ্বেগ উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এই ধরনের অস্ত্রব্যবস্থার উন্নয়ন যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং মানবিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। তাই এই সহযোগিতা নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত