ইসলামের পবিত্র এক ঐতিহ্য মাসজিদে আকসা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান, যা জেরুজালেমের পুরনো শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি একটি বিশাল চত্বর নিয়ে গঠিত, যার ভেতরে কিবলি মসজিদ, গম্বুজ সাখরা (পাথরের গম্বুজ), খোলা প্রাঙ্গণ, বারান্দা এবং অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে।
চত্বরটির আয়তন প্রায় ১৪.৪ হেক্টর, যা জেরুজালেমের পুরনো শহরের মোট আয়তনের প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ। মসজিদ চত্বরের চারপাশের প্রাচীর পশ্চিমে ৪৯১ মিটার, পূর্বে ৪৬২ মিটার, উত্তরে ৩১০ মিটার এবং দক্ষিণে ২৮১ মিটার দীর্ঘ, যা একে একটি অনন্য বহুভুজ আকৃতি প্রদান করেছে।
মাসজিদে আকসার ইতিহাস
মাসজিদে আকসার নির্মাণ ইতিহাস ইসলামের সাথে গভীরভাবে জড়িত। হজরত আবু জর গিফারি রাজিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কোনটি? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মাসজিদুল হারাম’। সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোনটি? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মাসজিদে আকসা’। সাহাবি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই মসজিদের নির্মাণের মাঝে কত বছরের ব্যবধান? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, চল্লিশ বছর।
অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, কাবার প্রথম নির্মাণকারী হজরত আদম আলাইহিস সালাম এবং পরবর্তীতে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এটিকে পুনর্নির্মাণ করেন। একইভাবে মসজিদে আকসার ভিত্তি স্থাপন হজরত আদম আলাইহিস সালাম করেছিলেন, যা পরবর্তীতে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম পুনর্নির্মাণ করেন।
মাসজিদে আকসার মর্যাদা ও পবিত্রতা
মাসজিদে আকসা ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থান। এটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা ছিল। এখান থেকেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজের ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হয়। আল্লাহ তাআলা এ মসজিদ ও এর আশপাশের অঞ্চলকে পবিত্র ও বরকতময় ঘোষণা করে ইরশাদ করেন ‘পবিত্র সত্ত্বা তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখাতে রাতের বেলায় নিয়ে গিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদে আকসায়। যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছি! (সূরা ইসরা: ১)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে আকসার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বলেছেন, ‘মাসজিদুল হারামের নামাজ অন্যান্য মসজিদের এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদ (মসজিদে নববী) এর নামাজ অন্যান্য মসজিদের এক হাজার নামাজের সমান এবং মাসজিদে আকসায় পড়া নামাজ অন্যান্য মসজিদের পাঁচশত নামাজের সমান।
মসজিদে আকসার গুরুত্ব
মাসজিদে আকসা শুধু স্থাপত্য বা ঐতিহাসিক নিদর্শন নয়; বরং এটি মুসলিমদের আধ্যাত্মিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানেই বহু নবী ইবাদাত করেছেন এবং এটি বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। ইসলামের সঙ্গে এর গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মুসলমানদের হৃদয়ে এর প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার সৃষ্টি করেছে।
মাসজিদে আকসা কেবল একটি স্থানের নাম নয়, বরং এটি এক পবিত্রতা ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি মুসলমানদের জন্য এক অমূল্য আধ্যাত্মিক সম্পদ, যা যুগ যুগ ধরে তাঁদের ইবাদাত, বিশ্বাস এবং ঐক্যের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।