নিউজনেস্ট

কেমন হবে আপনার বন্ধু?

কেমন হবে আপনার বন্ধু? ছবি: সংগৃহীত

জীবনের প্রতিটি পদে সঙ্গীর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সঙ্গীর প্রভাব কেবল ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, সমাজের সামগ্রিক চিত্রেও ছাপ ফেলে। দীন ইসলামে সৎ সঙ্গের গুরুত্ব অপরিসীম। সৎ সঙ্গীরা মানুষকে সৎ পথে পরিচালিত করে এবং তাদের জীবনকে সুন্দর, সুশোভিত ও অর্থবহ করে তোলে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে সৎ সঙ্গের গুরুত্ব বোঝা যায় গভীরভাবে।

হাদিসের আলোকে সঙ্গীর উদাহরণ

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গী ও খারাপ সঙ্গীর উদাহরণ হলো, আতরের ব্যবসায়ী এবং লোহার কামারের মতো। আতরের ব্যবসায়ীর থেকে হয়ত তুমি আতর কিনবে অথবা (অন্তত) তার সুগন্ধি পাবে, আর বিপরীতে লোহার কামারের কাছে হয়ত তোমার কাপড় পুড়ে যাবে অথবা (অন্তত) খারাপ গন্ধ পাবে।’ (সহিহ বুখারি)

এ হাদিসের আলোকেই স্পষ্ট হয়, সঙ্গী কেমন হবে, তা ঠিক করা জীবনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। একজন সৎ সঙ্গী কেবল বন্ধুত্বের সম্পর্ককেই নয়, একজন মানুষকে তার জীবনযাত্রার প্রতিটি ধাপে পথ দেখায়।

সৎ সঙ্গীর গুণাবলী

একজন সৎ সঙ্গী নিঃসন্দেহে আল্লাহপ্রদত্ত এক অনন্য নিয়ামত। সৎ সঙ্গীর গুণাবলী মানুষকে আলোর পথে চালিত করে এবং আঁধার থেকে মুক্তি দেয়।

১. হাসিমুখ ও আন্তরিক হওয়া

সৎ সঙ্গী সর্বদা হাসিমুখে থাকে এবং তার বন্ধুর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন করে। তার আচরণে মমতা ও মানবিকতা মূর্ত হয়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসে, আল্লাহ তাকে তার উক্ত ভালোবাসার জন্য ভালোবাসেন।’ (সহিহ মুসলিম)

২. অন্যায় থেকে বিরত রাখা

সৎ সঙ্গী সবসময় তার বন্ধুকে সৎ কাজের প্রতি উৎসাহ দেয় এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। কুরআন কারিমে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সেই জাতি, যাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখো।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)

৩. হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা

সৎ সঙ্গী সর্বদা হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকে। তার হৃদয় পূর্ণ থাকে প্রশান্তি ও সন্তুষ্টিতে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না। তোমরা সকলেই আল্লাহর বান্দা এবং পরস্পর ভাই’ (সহিহ মুসলিম)

৪. ভালো কাজে অনুপ্রেরণা

জীবনের কোন একটি পর্যায়ে অলসতা এসে যায়। সেসময় একজন সৎ সঙ্গী বন্ধুকে ভালো কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মুমিন আরেক মুমিনের জন্য একটি দালানের মতো, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে।’

৫. গোপনীয়তা রক্ষা করা

একজন সৎ সঙ্গী বন্ধুর গোপন কথা রক্ষা করে এবং তার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অন্যের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (সহিহ মুসলিম)

সৎ সঙ্গের উপকারিতা

সৎ সঙ্গী মানুষের জীবনে আলোর পথ প্রদর্শক। তার সঙ্গ একজন মানুষকে উন্নত নৈতিকতার পথে পরিচালিত করে। তার প্রভাবে জীবনে আসে ধৈর্য, মানবিকতা ও আত্মার পরিশুদ্ধি। একটি সৎ সঙ্গ যেমন দুনিয়াবি কল্যাণ এনে দেয়, তেমনি পরকালীন মুক্তির পথও সুগম করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ তার সঙ্গীর ওপর প্রভাবিত হয়। তাই (বুঝেশুনে) দেখো তুমি কার সঙ্গী হচ্ছো।’ (তিরমিজি)

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে সৎ সঙ্গীরা হয় আত্মিক শক্তি ও প্রেরণার উৎস। তাই সৎ সঙ্গের কল্যাণ থেকে কেউ যেন নিজেকে বঞ্চিত না করে। কারণ, সৎ সঙ্গীই জীবনের প্রকৃত পাথেয়।

ইসলাম ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত