বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী তৎপরতা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি তাদের সংগঠিত করার নেপথ্যে সরাসরি ভারতের মদদ থাকার প্রমাণ মিলেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত কৌশল পাল্টে পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরির মিশনে নেমেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং আশ্রয় দিচ্ছে ভারত। সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা ও মিজোরাম থেকে পরিচালিত শতাধিক ফেসবুক পেইজ, ওয়েবসাইট ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ব্যবহার করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
সম্প্রতি রাঙামাটির বন্দুকভাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এ অভিযানে এক সন্ত্রাসী নিহত হয়। এরপরই ভারতীয় নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অপপ্রচার শুরু হয়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার গুজব ছড়ানো হয়, যা বাস্তবে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে ছয়টি প্রধান সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয়। এর মধ্যে জেএসএস ও ইউপিডিএফ সবচেয়ে সহিংসতা চালায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মোবাইল টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, গ্রামবাসীদের ভয়ভীতি দেখানো—এসবই তাদের কর্মকাণ্ডের অংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৭ সালের তথাকথিত শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ভারত দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। সেনাক্যাম্প কমানোর ফলে দুর্গম এলাকায় সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। বর্তমানে এসব গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও অর্থের জোগান সরাসরি ভারত থেকে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গত ১৫ জানুয়ারি মিজোরামে ভারতীয় পুলিশ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করে, যা ইউপিডিএফের জন্য পাঠানো হচ্ছিল। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ছিল ছয়টি একে-৪৭ রাইফেল, ১০ হাজার রাউন্ড গুলি ও ১৩টি ম্যাগাজিন। প্রাথমিকভাবে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর জন্য এগুলো ভেবে জব্দ করা হলেও তদন্তে উঠে আসে, এসব অস্ত্র বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছিল।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহীদ উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। তাদের পুরনো কৌশল হলো ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা।’
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেনাক্যাম্প না বাড়ানো গেলেও বর্তমান ক্যাম্পগুলোতে সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি করা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ভারতের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা দরকার।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফেরাতে হলে ভারতীয় নেপথ্য ভূমিকার পর্দা ফাঁস করে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরাই এখন সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।