ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন গতি ফিরে এসেছে। সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বর মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা মাসের হিসেবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
গত ডিসেম্বরসহ ২০২৪ সালের পুরো বছরে রেমিট্যান্স আয় দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
হুন্ডি বন্ধ এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি
রেমিটেন্স খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ প্রবাসী আয়ের একটি বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতেন। ফলে এই প্রক্রিয়ায় প্রবাসীরা তাদের আয়ের টাকা বৈধ পথে না পাঠিয়ে অবৈধ পথে পাঠাতেন ।
তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হুন্ডি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর বাড়ানোর ফলে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বাজারের দামের পার্থক্য কমে এসেছে। এই কারণেই প্রবাসীরা এখন বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।
ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স
২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরে ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ রেকর্ড পরিমাণ ডলার দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি।
ইতিপূর্বে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে, যার পরিমাণ ছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ২০২৪ সালের জুন মাসে, যা ছিল ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
গত পাঁচ বছরের রেমিট্যান্সের তুলনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৯১ কোটি ডলার। এদিকে ২০২২ সালে ২ হাজার ১২৯ কোটি, ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার।
এই ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদগণ বলছেন, বর্তমান সরকারের নীতিমালা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রবাসী আয় বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। তবে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে দেশের ব্যাংকিং খাত এবং রেমিট্যান্স প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং প্রবাসীদের জন্য সুবিধাজনক করতে হবে।