দেশের অর্থনীতি এক সময় দুর্নীতি ও অনিয়মের কবলে পড়ে গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সূচকগুলো ছিল নিম্নমুখী। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের ভাবমর্যাদা বিশ্বদরবারে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৭.২ বিলিয়ন ডলার। এটি দেশের মোট পোশাক রফতানির ১৮.৭২ শতাংশ। ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ব্র্যান্ডগুলো চীন থেকে সরে এসে বাংলাদেশে কার্যাদেশ দিচ্ছে।
পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপড়েন থাকলেও বাংলাদেশের উৎপাদনকারীরা এসব দেশের কার্যাদেশ পেতে শুরু করেছে। এর ফলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
এদিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে ইতোমধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বর্তমান সরকার। চীন বাংলাদেশের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্কসহ বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এপ্রিল মাসে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে আসতে পারেন।
জাপানও বড় বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বাংলাদেশ এখন জাপানের জন্য আকর্ষণীয়। তবে বিনিয়োগ আকর্ষণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
দেশের গার্মেন্টস খাতে শ্রমিক অসন্তোষ এবং শেয়ারবাজারের সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়ায় অর্থনীতিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আবাসন খাতও এখনো সংকটে। অনেক বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে। বেক্সিমকোসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে সঠিক নীতি-কৌশল গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্য নীতিতে চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমেরিকান ব্র্যান্ডগুলো এখন বেশি করে বাংলাদেশের পোশাক আমদানি করছে।
পোশাক রফতানিকারকরা মনে করছেন, এই সুযোগ কাজে লাগাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক মানে উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হলে বাংলাদেশের রফতানি আয় আরও বাড়বে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের মেধা ও সম্পদ যাতে বিদেশে পাচার না হয়, সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখিতা রোধ করে দেশের উন্নয়নে তাদের মেধা কাজে লাগাতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. ইউনূসের বিশ্বব্যাপী ভাবমর্যাদা এবং বর্তমান সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেবে। তবে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দেশীয় বিনিয়োগ এবং বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করলেই অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে।