বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানির পথ বদলেছে। ভারতের বিমানবন্দর ও নৌবন্দর এড়িয়ে এখন মালদ্বীপের মাধ্যমে গার্মেন্টস পণ্য বিশ্ববাজারে পাঠাচ্ছে। এর ফলে ভারতের বন্দরগুলো বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্মকর্তারা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লাইভমিন্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ভারতের বিমান ও নৌবন্দর হয়ে রপ্তানি হতো। কিন্তু এখন মালদ্বীপ হয়ে নতুন রুট ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের এমএসসি এজেন্সি (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেডের মহাপরিচালক দীপক তিওয়ারি বলেছেন, আগে বাংলাদেশের পণ্য ভারতীয় বিমানবন্দর হয়ে যেত। কিন্তু এখন তারা অন্য রুট বেছে নিয়েছে, যার ফলে ভারত বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে।
ভারতের তিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন প্রথমে মালদ্বীপে পোশাক পণ্য পাঠায়। এরপর সেখান থেকে বিমানের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে সরবরাহ করা হয়। এই রুটে এইচঅ্যান্ডএম জারা, ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক রপ্তানি হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কৌশলগত একটি সিদ্ধান্ত। কেননা ভারতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশ তার রপ্তানি চেইনের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
পোশাক শিল্প বিশেষজ্ঞ অরুণ কুমার বলেছেন, গার্মেন্টস পণ্যকে পচনশীল পণ্য ধরা হয়। কারণ, সময়মতো পৌঁছানো না গেলে অর্ডার বাতিল হয়। যে কারণে নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতেই বাংলাদেশ নতুন পথ বেছে নিয়েছে।
এদিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশ এই ধারা অব্যাহত রাখলে দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের এমন সিদ্ধান্তে ভারত সরকার বিকল্প সমাধান খুঁজছে, যাতে ভারতের স্বার্থ রক্ষা হয় এবং বাংলাদেশের রপ্তানিও ব্যাহত না হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। তবে ২০২৩ অর্থবছরে এ রপ্তানি ১৭ শতাংশ বেড়ে ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
ইতিমধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগের বছর তৃতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে শুধু চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
২০২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে তুলাই ছিল ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ নতুন রপ্তানি পথ বেছে নেওয়ায় ভারতীয় অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।