নিউজনেস্ট

সমুদ্রপথে রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক যাত্রা অব্যাহত

সমুদ্রপথে রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক যাত্রা অব্যাহত
সমুদ্রপথে রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক যাত্রা অব্যাহত। ছবি : রোহিঙ্গা নিউজ এজেন্সি

সমুদ্র শান্ত হতেই আবারও ভয়ংকর নৌযাত্রায় ঝুঁকছে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০০ রোহিঙ্গা জরাজীর্ণ নৌকায় করে জীবন বাজি রেখে সাগর পাড়ি দিয়েছে।

একটাই উদ্দেশ্য—বেঁচে থাকা। কেউ পালাচ্ছে মিয়ানমারের ভয়াবহ দমন-পীড়ন থেকে, কেউ মুক্তি চাইছে বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরের দুর্বিষহ জীবন থেকে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারা ছুটছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড কিংবা শ্রীলঙ্কার দিকে। কিন্তু সাগরপথে যাত্রা করলেই কি গন্তব্য নিশ্চিত? কজন পৌঁছাতে পারবে, কজন সাগরে হারিয়ে যাবে—তা কেউ জানে না।

২০২৪ সালে একইভাবে সাগর পেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল ৭,৮০০–এর বেশি রোহিঙ্গা। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। কিন্তু সবাই কি তীরে পৌঁছাতে পেরেছিল? না। ওই বছর অন্তত ৬৫০ জন রোহিঙ্গা নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হয় কিংবা সাগরে প্রাণ হারায়।

জাতিসংঘ বলছে, ২০২৪ সালে রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি নৌযাত্রা করেছিল বাংলাদেশ থেকে, যেখানে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকেই সরাসরি পালানোর প্রবণতা বেড়েছে, কারণ সেখানে দমন-পীড়ন আরও তীব্র হয়েছে।

সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হতে পারে। বর্ষার পর সমুদ্র শান্ত হলে এবং মিয়ানমারে নির্যাতন আরও বাড়লে রোহিঙ্গাদের এই মৃত্যুযাত্রা আরও তীব্র হবে। জাতিসংঘ আগেই আঞ্চলিক দেশগুলোকে সতর্ক করেছিল—শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো বা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের নামে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু তাদের কথা শোনার লোক কই?

চলতি জানুয়ারিতেই ২৬৪ রোহিঙ্গা দুটি নৌকায় মালয়েশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছায়, কারণ মালয়েশিয়া তাদের নিতে রাজি হয়নি। আরেকটি নৌকা ৭৫ জনকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বাধা দেওয়া হয়। মালয়েশিয়া কেবল একটি নৌকা থেকে ১৯৬ জন রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করেছিল। অন্যদিকে, থাইল্যান্ড উপকূলে পৌঁছানো ৫০ রোহিঙ্গাকে আটক করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এটাই রোহিঙ্গাদের বাস্তবতা। ঘরহারা, দেশহারা এক জনগোষ্ঠী, যারা একটু আশ্রয়ের আশায় প্রাণপণে ছুটছে সাগরের অন্ধকারে। কেউ পৌঁছায়, কেউ হারিয়ে যায়। তবু এই ভয়ংকর যাত্রা থামে না, কারণ পেছনে ফেরার কোনো পথ নেই।

নিউজনেস্ট ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত