নিউজনেস্ট

মিয়ানমারে ছয় মাসে ২১৫৫টি বিমান হামলা, ধ্বংসস্তূপে পরিণত বহু এলাকা

মিয়ানমারে ছয় মাসে ২১৫৫টি বিমান হামলা, ধ্বংসস্তূপে পরিণত বহু এলাকা
মিয়ানমারে ছয় মাসে ২১৫৫টি বিমান হামলা, ধ্বংসস্তূপে পরিণত বহু এলাকা। ছবি : আরাকান নিউজ এজেন্সি

মিয়ানমারে গত ছয় মাসে ২১৫৫টি বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এসব হামলার ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে হাজারো মানুষ। যারা থেকে গেছে, তাদের অনেকেই স্বজন হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে।

মিজিমারে গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের ১২টি রাজ্য ও অঞ্চলে এসব হামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরাকান, কাচিন, চিন ও শান রাজ্য। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছে মান্দালয় অঞ্চলে, যেখানে ৫০০টিরও বেশি বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১১১টি শহর ও গ্রামে বিমান হামলা হয়েছে। আরাকানের আন শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে ১৫১টি বিমান হামলা হয়েছে। একের পর এক বোমায় গ্রামগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, পুড়েছে ঘরবাড়ি, গুঁড়িয়ে গেছে হাসপাতাল, স্কুল ও শরণার্থী শিবির।

হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো জানিয়েছে, রাতের আঁধারে হঠাৎ আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ শুরু হয়। কিছু বোঝার আগেই ঘরের চাল ভেঙে পড়ে, চারপাশে আগুন ধরে যায়। কেউ কেউ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, কেউবা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়ে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর লক্ষ্য শুধু বিদ্রোহীরা নয়, সাধারণ মানুষও। গ্রাম, সরকারি ভবন, শরণার্থী শিবির, স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি উপাসনালয়ও হামলার শিকার হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ১০০০ পাউন্ড ওজনের বড় বোমা ব্যবহার করা হয়েছে, যা পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে।

আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, সেনাবাহিনী অন্তত দুবার ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। এই বোমাগুলো বিস্ফোরণের পর ছোট ছোট বোমায় বিভক্ত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এসব হামলায় বহু শিশু আহত হয়েছে। অনেকেই হাত-পা হারিয়েছে, এমনকি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের লাশ খুঁজে পেয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিমান হামলায় সেনাবাহিনী রাশিয়া ও চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও পরিবহন বিমান ব্যবহার করেছে। সাধারণত সকাল ও দুপুরে বিদ্রোহী লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলা চালানো হলেও মধ্যরাত ও ভোরবেলায় বেসামরিক এলাকায় বোমা ফেলা হয়। তখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকায় বাঁচার সুযোগ কম থাকে।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে সংঘাত চলছে। সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে এবং বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এরপর সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী গঠিত হয়, যারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিরোধ বাহিনীর কাছে একাধিক পরাজয়ের পর সেনাবাহিনী প্রতিশোধ নিতে সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী পরাজয়ের মুখে বেসামরিক এলাকাগুলো ধ্বংস করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, এখন সাধারণ মানুষই প্রধান লক্ষ্য।

দেশটিতে কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। প্রতিদিন নতুন নতুন হামলা চলছে, ধ্বংস হচ্ছে মানুষের স্বপ্ন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো নীরব। বরং কিছু দেশ অস্ত্র সরবরাহ করে এই সংঘাতকে আরও উসকে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মিয়ানমারের মানুষকে আরও দীর্ঘ সময় রক্তপাত ও সহিংসতার মধ্যে কাটাতে হবে, হারাতে হবে আরও হাজারো প্রাণ।

নিউজনেস্ট ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত